নিজস্ব সংবাদদাতা: বিশ্বজোড়া সমালোচনার মুখে তালিবানরা গুটিয়ে গিয়ে জানিয়েছিল পুলিৎজারজয়ী ভারতীয় চিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকীকে তারা হত্যা করেনি। যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে ছবি তোলার সময় দুর্ঘটনাবশত: গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের কান্দাহারে গত শুক্রবার সেই মর্মান্তিক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্তব্ধ হয়ে গেছিল সারা সংবাদ দুনিয়া। ২০১৮ সালে বিশ্বখ্যাত পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মুম্বাইনিবাসী রয়টার্সের চিফ ফটোগ্রাফারের এই মর্মান্তিক পরিণতি মানতে পারেনি বিশ্ব। ধিক্কারে গর্জে উঠেছিল দুনিয়ার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। আর সেই সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়ে গুটিয়ে গেছিল তালিবান জঙ্গিরা। দুঃখ প্রকাশ করে তারা জানিয়েছিল তারা এই ঘটনা ঘটায়নি, দুর্ঘটনাবশতঃ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দানিশ।
এক তালিবান পাশাপাশি এও জানিয়েছিল, যে, সাংবাদিকদের উচিত যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশের আগে জানিয়ে ঢোকা। মুম্বইয়ের চিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তারা কিছুই জানত না বলেই সাফাই গেয়েছিল ফের আফগানিস্তানের দখল নিয়ে ফেলা জঙ্গি গোষ্ঠী। যদিও মুখোশ খুলে ফেলতে বেশি সময় নিলনা তারা। ঘটনার ৫ দিনের মাথায় এক আফগান সেনা কমান্ডার জানিয়ে দিলেন, দানিশকে কেবল গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি তালিবান জঙ্গিরা। তাঁর মাথাও থেঁতলে দেওয়া হয় সাঁজোয়া গাড়ির চাকায়!
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় বিলাল আহমেদ নামের ওই কমান্ডারের মুখে শোনা গেল এমনই মর্মান্তিক বর্ণনা। তিনি দাবি করেন, ভারতীয় সাংবাদিককে মেরে ফেলেই শান্ত হয়নি তালিবান জঙ্গিরা। তাঁর মৃতদেহের সঙ্গেও নির্মম আচরণ করে তারা। গাড়ির তলায় রেখে থেঁতলে দেওয়া হয় মাথা। কিন্তু কেন? একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন দানিশ। তবুও কেন এই নির্মমতার শিকার হতে হল তাঁকে! এর জবাবে ওই কমান্ডারের দাবি, ‘‘কারণ দানিশ ভারতীয়। আর ভারতীয়দের তালিবানরা ঘৃণা করে।’’
উল্লেখ্য পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী রয়টার্সে কর্মরত ভারতীয় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে আফগান সেনার সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে তালিবানের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ওই সাংবাদিকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তারা কিছুই জানত না। দুঃখপ্রকাশ করে তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদ বলেন, ‘‘আমরা একেবারেই অবগত নই কে ওঁকে গুলি মেরেছে। কী করে উনি মারা গেলেন সেবিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।’’
পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, ‘‘যে কোনও সাংবাদিকেরই উচিত যুদ্ধক্ষেত্রে ঢোকার আগে আমাদের তা জানানো। তাহলে আমরা তাঁর আলাদা খেয়া ল রাখব। আমাদের আফশোস, সাংবাদিকরা কাউকে না জানিয়েই সংঘর্ষের এলাকায় ঢুকে পড়ছেন। নিহত ভারতীয় সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকির মৃত্যুতে আমরা দুঃখিত।’’ এবার বিলাল আহমেদের দাবি থেকে উঠে এল সম্পূর্ণ অন্য ছবি। আর আরও একবার প্রমাণিত হল যে জঙ্গিরা গণতান্ত্রিক কোনও শক্তিকেই সহ্য করতে পারেনা।