নিজস্ব সংবাদদাতা: নাম রেখেছিল থাইল্যান্ড। নাম উম্ফান। মে’র প্রথমেই বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস আগেই দেওয়া ছিল। সেই ঝড়ের নাম কী হবে সেটিও ঠিক করে রাখা। এ মরসুমের শেষ সাইক্লোনের নাম রেখেছে থাইল্যান্ড। আবহাওয়া অফিসের মেঘ মানচিত্র বলছে, ‘আম্ফান’ নামের পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়টি একটু একটু করে শক্তি সঞ্চয় করছে দূর সমুদ্রে। ধারণা করা হচ্ছে, মে মাসের প্রথমেই এটি প্রবল হয়ে উঠবে। এর প্রভাবে নিম্নচাপের আশঙ্কা রয়েছে,সেটাই কি তবে ‘উম্ফান ’ হতে যাচ্ছে ?
এমনিতেই অসম থেকে বিহার হয়ে উত্তরপ্রপদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল নিম্নচাপ। তার উপর বঙ্গোপসাগরে আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। সেই ঘূর্ণাবর্ত ক্রমেই নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়েছে। আর তার জেরেই গত কয়েকদিন ধরেই ভাসছে দক্ষিনবঙ্গ। এই পুরো সপ্তাহটাই নাকি এমনই চলবে ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। আবহিবদরা জানিয়েছেন, ওই নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে। তারপরই সেই ঘূর্ণিঝড় ‘উম্ফান’ নাম নিয়ে তাণ্ডব চালাতে পারে বঙ্গোপসাগরে।করোনাকালের প্রথম ঘূর্ণিঝড়। তবে এই ঝড় উপকূলে আঘাত হানবে কি? দুশ্চিন্তায় আবহাওয়াবিদরা।
বৃটিশ আবহাওয়া দপ্তর উপগ্রহ চিত্র পর্যালোচনা করে পূর্বাভাস দিয়েছে , ঘূর্ণিঝড়ের আগে বাংলাদেশ উপকূলে নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। ফলে এই সময়ে বেঙ্গল বেসিনে টানা প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে। তারা ঘূর্ণিঝড়ের যে চিত্র দেখাচ্ছে, সেখানেও আম্ফানকে যথেষ্ট দুর্বল হিসেবেই উপস্থাপন করা হলেও তা ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে প্রবল হতে পারে বলেও সতর্ক করেছে ব্রিটিশ আবহাওয়াবিদরা।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বর্ষা মৌসুমের আগেই নিম্নচাপ শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সময়ে সাধারণত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ‘গত বছরও এই সময়ে আমরা ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরে ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া পূর্বাভাস যেহেতু আছে সেক্ষেত্রে এটিকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। তবে এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা মুশকিল।’
বর্তমান তবে নিম্নচাপের জেরে সাগর ক্রমশ উত্তাল হচ্ছে। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গসহ আন্দামান, মায়ানমার, বাংলাদেশ উপকূলে ফুঁসছে সমুদ্র। ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় আপাতত ২ মে পর্যন্ত আকাশের মুখ ভার থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। ফলে বজ্রগর্ভ মেঘের সঞ্চার হবে। এবং বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়াও।
আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সপ্তাহকাল ধরে আকাশের মুখভার হয়ে আছে। এমন ধারাই আপাতত চলবে। এখনও চারদিন মেধ-বৃষ্টির সঙ্গে রোদের খেলা চলবে। এরপর যদি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তবে দুর্যোগ আরও বাড়বে। রাজ্যের দু-প্রান্তে দু-টি নিম্নচাপের কারণে জলীয় বাষ্প ঢুকেই বিপত্তি ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
শীঘ্রই বঙ্গোপসাগরে এই মরসুমের প্রথম সাইক্লোন তৈরি হতে চলেছে বলে জানিয়েছিল হাওয়া অফিস। জানানো হয়েছিল ২৭ এপ্রিল আন্দামান সাগরের উপর এই ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে। পরদিন ২৮ এপ্রিল একই অঞ্চলে থেকে তা শক্তি সঞ্চয় করবে। ২৯ এপ্রিল ওই ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবে। এখন পর্যন্ত সেইসব হয়েছে। এখন দেখার ৩০ এপ্রিল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় কি না।
সাধারনত মরসুমের প্রথম ঝড় সমুদ্রের সমস্ত তাপ সম্ভাবনাকে হ্রাস করে এবং তাই প্রচন্ড শক্তিশালী হয়ে মারাত্মক ও বিধ্বংসী রূপ নিয়ে থাকে এমন বেশ কিছু ঝড়ের ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। এই ঝড় পূর্বাভাস, তীব্রতা, ট্র্যাক, গতি এবং সময়সীমা বোঝা খুব মুশকিল হয়। তাই এই ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করার জন্য আগমা সঠিক পদক্ষেপ এবং সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। একে করোনার দুর্যোগ, তারপর চলতি ঘূর্ণাবর্ত দুই বাংলার কৃ্ষি অর্থনীতিকে যথেষ্ট ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এরপরই যদি সত্যি সত্যি উম্ফান আসে তবে কী হবে , ভাবছে দুই বাংলাই।