নিজস্ব সংবাদদাতা: কোনও জনসভা নয়, নয় কোনও নির্বাচনী প্রচার সভাও তবুও বসিরহাট কলেজের হেলিপ্যাডে তিনি পা রাখতেই আওয়াজ উঠল, মোদি মোদি! একেবারে সমস্বরে, নির্দিষ্ট ব্যবধান বজায় রেখেই করতালির মতই মোদি মোদি আওয়াজে ফেটে পড়ল বসিরহাট কলেজ প্রাঙ্গন। ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ পেরিয়ে এসেছে বাংলা যার মধ্যে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিন ২৪পরগনার সিংহভাগই। সেই দুর্গত দুনিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে সব হারানো মানুষের সমোচ্চারিত, স্বতস্ফূর্ত এই আওয়াজ বুঝিয়ে দিল এই দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিতেই ভরসা রাখছেন তাঁরা। ২০২১য়ের আগে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে দেখলে এটা বিজেপির কাছে উৎসাহিত হবার মতই ঘটনা বৈকী।
বসিরহাটে নামার আগে প্রধানমন্ত্রী এদিন হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে নিয়ে দুই ২৪ পরগনার বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের ২কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী। বসিরহাট কলেজে প্রশাসনের কর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, শীঘ্রই কেন্দ্রীয় টিম এসে রাজ্যের পরিস্থিতি দেখে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করবে। এর পরে কেন্দ্র অর্থের ব্যবস্থা করবে। আপাতত কেন্দ্র এক হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে রাজ্যকে। এছাড়াও উমফানের দাপটে মৃতদের পরিবার পিছু ২ লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী বিপর্যয় মোকাবিলা ফান্ড থেকে।
শুক্রবার বৈঠকের শেষে মূখ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়েই দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্থ সাহায্যের ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, একে করোনার দাপট চলছে তার উপরে রাজ্যে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে লড়াই চালাচ্ছে বাংলা। এর পরেও যত রকম ভাবে কেন্দ্রের তরফে সাহায্য করা যায় তা করা হবে। গোটা দেশ থাকবে বাংলার পাশে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণঝড়ের দাপটে কমপক্ষে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবারবর্গকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে আমি সমবেদনা জানাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “এটা বড় সংকটের সময় রাজ্যের কাছে। আমি মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের সঙ্গে অনেকটা এলাকা ঘুরে দেখলাম। এখন বাংলার পুনর্গঠন দরকার। আশা করব খুব তাড়াতাড়ি সেই লড়াইয়ে জয় পাবে রাজ্য।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা দুনিয়া এখন এক বড় সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যেই এসেছে ঘূর্ণিঝড়। দু’টো সম্পূর্ণ উল্টো লড়াই। একটিতে যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকতে হবে। বাড়ির বাইরে জরুরি কারণ ছাড়া বের হওয়া যাবে না। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মানে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। মোদী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সেই লড়াই লড়ছে বাংলা।
আমফানে বিধ্বস্ত এলাকা দেখার পর একই হেলিকপ্টারে বসিরহাট কলেজের হেলিপ্যাডে নেমেছেন সবাই। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা আধিকারিকরা নামার পর নেমে আসেন রাজ্যপাল। তাঁর একটু পরেই নামেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এরপর বেশ খানিকটা পরে নামেন প্রধানমন্ত্রী। এতক্ষন জনতা যেন তাঁরই প্রতীক্ষায়। আশেপাশের বাড়ির ছাদ, কলেজের কার্নিশ উপচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ চিৎকার করে ওঠেন মোদি মোদি বলে। অথচ তখন বৈঠক শুরুই হয়নি, হাজার কোটি টাকার ত্রান ঘোষনার প্রশ্নই নেই। তার আগেই যেন মুশকিল আসান মোদি। মোদি মোদি আওয়াজের মধ্যেই কলেজের ভেতরে ঢুকে গেলেন তিনি, মূখ্যমন্ত্রী অবশ্য তারও আগে ঢুকে পড়েছিলেন তাই এই আওয়াজ তিনি শুনেছেন কিনা বোঝা যায়নি।