নিজস্ব সংবাদদাতা: দুপুর দেড়টা তখনও দিঘা থেকে প্রায় ১০০কিলোমিটার অবস্থান করছে আমফান ঝড়ের দাপট শুরু হয়ে গেল খড়গপুর আর মেদিনীপুরে। সকাল থেকেই বৃষ্টি আর বাতাসের দমক থাকলেও ১০টা অবধি খড়গপুর মেদিনীপুরের বাতাসের গতিবেগ ৪০ কিলোমিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাও মাঝে মাঝে কিন্তু দুপুর দেড়টা নাগাদ বাতাসের গতিবেগ ক্রমশ বাড়তে থাকে সঙ্গে বৃষ্টির ঝাপটা। দুপুর ২.৪৫ এখনও আমফান পৌঁছায়নি দিঘায় কিন্তু খড়গপুর আর মেদিনীপুরে ৫০ থেকে ৫৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। টিনের শেড, ঘরের জানলা দরজায় ক্রমাগত বাতাসের ধাক্কা। দুলতে শুরু করেছে গাছপালা। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার অবধি ঝড়ের গতিবেগ থাকতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরে।
ঝড়ের এই সম্ভাব্য দুর্যোগের কথা মাথায় রেখেই মঙ্গলবার রাত থেকেই দাঁতন ও বেলদা এলাকায় উদ্ধার অভিযান শুরু করেছিল প্রশাসন। রাতেই সোনাকনিয়া সীমান্ত থেকে ঘর ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের সংলগ্ন সাতটি লজ এবং স্কুল গুলিতে সরিয়ে আনা হয়। পাশাপাশি দাঁতনের দুটি ব্লক এলাকা ও মোহনপুর ব্লকের কাঁচা দুর্বল বাড়ি থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে। বেলদা থানা এলাকার সাবড়া, মহম্মদপুর, নেকুড়শেনি, খাকুড়দা ইত্যাদি এলাকার মাটির বাড়ি, খড়ের চাল যুক্ত বাড়ি ও দুর্বল কাঠামোর বাড়ি গুলিতে থেকে প্রায় ২হাজার মানুষকে উদ্ধার করে আনা হয়েছে বড় মোহনপুর হাই স্কুলে। সর্বত্রই আরও উদ্ধার কাজ চলছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই অংশেই সবচেয়ে ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছে প্রশাসন।
অন্যদিকে মারাত্মক অবস্থা দিঘা সহ পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলে। শুরু হয়েছে প্রবল জলোচ্ছাস। ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে রাজ্যের সমুদ্র উপকূলে ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এতেই দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে ভয়ে কাঁটা হয়ে আছেন রামনগর ১ ব্লকের শঙ্করপুর লাগোয়া শ্যামপুর, তাজপুর, ও জামড়া গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা। আয়লা থেকে বুলবুল, যে কোনও দুর্যোগেই বারবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে এলাকার সমুদ্রবাঁধ। ক্ষতের স্মৃতি এখনও দগদগে। দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রবাঁধ অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় জলোচ্ছ্বাসে এই সমস্ত এলাকা প্লাবিত হয় বারবার।সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ে পুকুর, মাছ চাষের ভেড়ি এবং ধানের জমিতে। আমফান ধেয়ে আসায় ফের জোয়ারের সময় জল ঢোকার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
এই বিপর্যয় থেকে এলাকার মানুষকে বাঁচাতে চূড়ান্ত তৎপরতা চলছে প্রশাসনিক মহলে। ইতিমধ্যেই সমুদ্রবাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলি থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সমুদ্রবাঁধ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় আপদকালীন বাঁধ মেরামতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায়। শাল বল্গার ওপর ফেলা হচ্ছে বোল্ডার,বালির বস্তা। মঙ্গলবারের পর আজ, বুধবারও ফের বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ মেরামত করা হবে। কাঁথি সেচ দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইজ্ঞিনিয়ার স্বপন পন্ডিত বলেন, ‘শঙ্করপুর থেকে তাজপুরের মাঝে কয়েকটি জায়গায় সমুদ্রবাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করে বোল্ডার, বালির বস্তা ফেলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ শুরু করা হয়েছে।’
এই এলাকায় কংক্রিট সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও লকডাউনের জন্য শুরু করা সম্ভব হয়নি বাঁধ নির্মাণের কাজ।এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশিকা বলছে, বিরাট ক্ষয়ক্ষতি করবে সুপার সাইক্লোন আমফান। তাই দুর্বল সমুদ্রবাঁধে বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়ছে। এখনও অবধি ৬০ হাজার মানুষকে সরানো হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে।