নিজস্ব সংবাদদাতা: ১৮ঘন্টায় ৪০০কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এখন দিঘা থেকে ৫৭০কিলোমিটার দুরে রয়েছে আমফান। আর তাতেই থরহরি কম্প শুরু হয়ে গেছে সমুদ্র ও উপকুলবর্তী এলাকায়। গতকাল যখন দিঘা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দুরে আমফান ছিল তখন তার গতিবেগ ছিল মাত্র ১৩কিলোমিটার প্রতিঘন্টায় আর এখন তা ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। স্থলভাগের যত কাছাকাছি আসবে ততই বাড়বে গতি ফলে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটার বেগেও আছড়ে পড়তে পারে দিঘায়। এদিকে আমফান ৫০০ কিলোমিটার দুরে থাকতেই ফুঁসতে শুরু করেছে সমুদ্র। শুরু হয়ে গেছে বৃষ্টি। পশ্চিমবঙ্গের আরও কাছে চলে আসায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবেই এই পরিবর্তন বলে জানা গেছে।
ব্যাপক ঝড় হাওয়া শুরু হয়েছে ওড়িশার পারাদ্বীপ এলাকায় কারন সেখান থেকে মাত্র ৪২০ কিলোমিটার দূরে। বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। পারাদ্বীপ খেপুপাড়া জুড়ে ডানা ছড়িয়ে থাকা আমফানের মুখ বা কেন্দ্রভাগ যাকে বলা হয় ঝড়ের মুখ তা থাকতে পারে দিঘায় আর তা যদি হয় তবে সর্বনাশের প্রহর গুনছে দিঘা। আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে স্থলভাগে যখন আছড়ে পড়বে ঘূর্ণনের গতিবেগ হবে ১৫৫-৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এমনকি তা ১৮০ কিলোমিটারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে হবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। আমফানের প্রভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এদিন সকাল থেকেই সৈকত শহর দিঘা এবং সংলগ্ন উপকূল এলাকার আকাশ ছিল মেঘলা। সোমবার সন্ধের পর থেকেই ছিল অসহনীয় তাপমাত্রা তার সঙ্গে বাতাসে মিশে থাকা ভারী জলীয় বাষ্পের প্রভাবে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় হাঁসফাঁস অবস্থা।
মঙ্গলবার সকালে জোয়ারের সময় জলস্ফীতি ঘটে সমুদ্রে। জলোচ্ছ্বাসও দেখা যায় বেশ কিছুক্ষণ। বৃষ্টি শুরু হয় বিকেল নাগাদ। কিন্তু এতেও তাপমাত্রার তেমন হেরফের হয়নি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উপকূলের মানুষের কাছে আতঙ্ক বেড়েছে আরও। ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে ব্যাপক ক্ষতির। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে দিঘা এবং সংলগ্ন উপকূল এলাকা। তা ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার সন্ধে নাগাদ অধিক গতি নিয়ে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আমফান স্থলভূমিতে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। দিঘার উপকূলের দিকে যত এগিয়ে আসছে, তত বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের গতি। স্বাভাবিকভাবে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। তাই এই বিপর্যয় থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূল অঞ্চলের মানুষকে বাঁচাতে চূড়ান্ত তৎপরতা চলছে প্রশাসনিক মহলে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রামনগর-১ ও ২, কাঁথি-১ ও ২, খেজুরি-২, নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকের সমুদ্রবাঁধ সংলগ্ন এলাকাগুলি থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪০ হাজার বাসিন্দাকে বিভিন্ন স্কুল ও দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি অনুযায়ী বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ব্লক অফিসগুলোতে চালু হয়ে গিয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। বাড়তি নজর ও সতর্কতা বেড়েছে দিঘা থেকে শঙ্করপুর, তাজপুর থেকে মন্দারমণি সর্বত্র। মজুত রাখা হয়েছে ৪০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার।
- এছাড়া কাঁথি মহকুমায় সাড়ে ছ’হাজার, এগরায় চার হাজার, তমলুক ও হলদিয়া মহকুমায় সাড়ে তিন হাজার করে ত্রিপল পাঠানো হয়েছে।” ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স-এর ৪ ব্যাটালিয়ন পৌঁছে গেছে জেলার দিঘা, হলদিয়া, নন্দীগ্রাম-খেজুরিতে এলাকায়। সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর ৩০সদস্যের টাস্ক ফোর্সও পাঠানো হয়েছে দিঘাতে। আগামী জেলার উপকূলবর্তী এলাকায় তিনদিন বন্ধ রাখা হবে ফেরি সার্ভিস। সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের।
অন্যদিকে আমফানের দাপটে বৃষ্টি শুরু বসিরহাট, কুলতলিতে। মানুষজনকে কাঁচা বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে, সাইক্লোন শেল্টারে।সুপার সাইক্লোন আমফান মোকাবিলায় প্রস্তুত হুগলি জেলা প্রশাসন। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে। কাঁচা বাড়ি থেকে ৭ হাজারের বেশি মানুষকে সরানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। বিদ্যুৎ দফতর, স্বাস্থ্য দফতর, সেচ, কৃষি, দমকল,পুলিস-সহ ২৪ টি দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে।