নিজস্ব সংবাদদাতা: বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গপোসাগর উপকূলে ঝাঁপাতে চলেছে আমফান এমনটা ধরে নিয়েই চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। দিঘা অভিমুখেই তার গতি অনুমান করে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পিপিই কিট পরেই প্রাক দুর্যোগ ও দুর্যোগ পরবর্তী অবস্থা সামাল দিতে তৈরি করা হচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। কারন আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে যত শক্তিশালী হচ্ছে তত দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে আমফান। আগের থেকে আরও বেশি গতিতে ধেয়ে আসছে সে। ঘণ্টায় এখন ১৩ কিমি বেগে এগিয়ে আসছে আমফান । উপগ্রহ চিত্রের পর্যবেক্ষণ বলছে, দীঘা থেকে এখন তার অবস্থান ৯৮০ কিমি দূরে।
বাংলার দিকে ক্রমশই এগিয়ে আসছে আমফান। আপাতত তার চলার পথ দেখে মনে হচ্ছে উত্তর দিক দিয়েই সম্ভবত স্থলভাগে ঢুকবে সে। বাংলার দিকেই বাঁক নেবে ঘূর্ণঝড়। কিন্তু কোথায় ল্যান্ডফল হবে? এ নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাজ আলিপুর আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল। তবে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ, গতিবেগ ও গতিবিধি বিচার বিবেচনা করে দেখা যাচ্ছে দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়ার মধ্যবর্তী কোনও জায়গায় আছড়ে পড়তে পারে আমফান। বুধবার বিকেল সন্ধে নাগাদ সম্ভবত স্থলভাগে ঢুকবে সে। তবে যত শক্তি বাড়াচ্ছে, ততই দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসছে আমফান। প্রথমে ৩কিমি প্রতি ঘণ্টায় বেগে এগোচ্ছিল আমফান। এখন ঘণ্টায় ১৩কিমি গতিতে এগোচ্ছে।
দীঘা থেকে এখন তার অবস্থান ৯৮০ কিমি দূরে। আম্ফানের দাপটে দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪পরগনায় ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিমি বেগে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতাতেও আমফানের প্রভাব পড়তে পারে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। কলকাতায় ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে। সঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে এই সবটাই হচ্ছে আমফানের লেজের ঝাপটা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় যখন ভূমি স্পর্শ করবে, তখন তার গতিবেগ কত থাকতে পারে? আয়লা, বুলবুলের মতো আম্ফানেরও সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিমি থাকতে পারে বলে আশঙ্কা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতিপথ দেখে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওডিশা উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে এই ঘূর্ণিঝড় বয়ে যেতে পারে বলে। সেক্ষেত্রে বুধবারই দিঘা উপকূল ছুঁয়ে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাবে সুপার সাইক্লোন আমফান। সুপার সাইক্লোনে রূপ নিলে এই ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ২২০ থেকে ২৬৫ কিলোমিটার। আর উপকূলের দিকে এগোতে থাকলেই রূপ নেবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের। আমফানের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতে।পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা ও কাঁথি উপকূলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা। মহামারী আবহের মধ্যে তাই দুর্যোগের আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছেন সমুদ্র উপকূলের মানুষ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার উপকূল এলাকার রামনগর ১, ২, কাঁথি ১, ২ এবং খেজুরি ব্লকে চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।উপকূল এলাকার ২৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক পার্থ ঘোষ।
মঙ্গলবার সকাল থেকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু করবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। জেলাশাসক বলেন,’ করোনার কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই যাতে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারেন সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। এ জন্য ৪৩টি রেসকিউ সেন্টার, ৩০টি ফ্লাড শেল্টার সহ ২৫০ টি স্কুল বিল্ডিং প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে উপকূল এলাকার ব্লকগুলোতে। পর্যাপ্ত ত্রিপল ও ত্রাণ মজুত করা হয়েছে। নজর রাখা হচ্ছে পরিস্থিতির ওপর।বিদ্যুৎ, পানীয়জল সহ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি বিভাগকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’ সোমবার সকাল থেকে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স এবং সিভিল ডিফেন্সের উদ্ধারকারী দল এবং দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, জলধার গ্রামগুলিতে মাইক নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করেন।
মহামারী আবহের মধ্যে দুর্যোগ আশঙ্কায় মানুষকে আতঙ্কিত হতে না বলা হয়। নিষেধ করা হয় দুর্যোগের সময় বাড়ি থেকে না বেরোতে। প্রাণহানি রুখতে চিহ্নিত করা হয়েছে ভাঙাচোরা মাটির বাড়ি এবং ঝুপড়ির বাসিন্দাদের। তাঁদের সরিয়ে আনা হবে দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রে।