শশাঙ্ক প্রধান: যতদূর দেখা যায় লালে লাল, মাঝে মাঝে তিনরঙা পতাকার মাঝে হাত চিহ্ন! ঠিক শেষবার যেমনটা দেখা গেছিল ২০১৬তে, যখন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে জড়িয়ে ধরে ভোট বৈতরণী পেরিয়ে গেছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস নেতা মানস ভূইঁয়া। ভোট পেরিয়েছিলেন বটে কিন্তু মামলার ঘোঁট পেরুতে পারেননি। বিরোধীদের দাবি জয়দেব জানা হত্যাকাণ্ডের জট থেকে বের হতে অবধি শেষ অবধি বাম-কংগ্রেস ভোট জামানত রেখে তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
যদিও বাম আর কংগ্রেস সমর্থকদের যে খুব বেশি হেরফের হয়নি তাতে তাই আরেকবার প্রমাণিত হয়ে গেল আরেকবার। শুক্রবার সবংয়ের বুড়ালে সিপিএম তথা বাম কংগ্রেসের জোটের সভা যেন ধুয়েই দিল মানস ভূঁইয়ার গড় বলে পরিচিত সবংকে। বলতে অসুবিধপ নেই যে, এতবড় সমাবেশ ইদানিং কালে সবং দেখেনি। গত অক্টোবরে পুজোর এই বুড়াল বাজারে সভা করেছিল বিজেপি। তার কয়েকদিনের মধ্যে এই একই জায়গায় পাল্টা সভা করেছিলেন মানস ভূঁইয়ারা। কিন্তু সেই দুই সভার মিলিত জমায়েতকেও ছাপিয়ে গেছে শুক্রবারের বাম-কংগ্রেসের জোটের সভা। সভা হয়েছিল ঠিক সেই বুড়াল বাজারেই।
সভা যখন সবংয়ে তখন মানস ভূঁইয়ার প্রসঙ্গ আসবেনা এমনটা হয়না। এদিনও তা হয়নি। লাল আর তেরঙা ভিড়ে ঠাসা সভায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কংগ্রেস সভাপতি সমীর রায় এদিন নাম না করেই তীব্র শ্লেষে বিঁধেছেন তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ মানস ভূঁইয়াকে। বলেন, “এখানে আমাদের একজন নেতা ছিলেন, বড় নেতা হয়েছিলেন। প্রতিটা ভাষণে এখানকার তিনটে নদীর কথা বলতেন। এতদিন লোকে জানত নদী দিয়ে জলস্রোত বয়ে যায় কিন্তু উনি মন্ত্রী হওয়ার পর জানা গেল যে নদী দিয়ে মুদ্রাস্রোত বয়ে যায়!” এই কথার পরই হাত তালির ঝড় বয়ে যায়।
২০১১তে ভোটে জেতার পর কংগ্রেস তৃনমূল জোট সরকারের সেচ মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং সেই সময় কেন্দ্র কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পে কয়েকশ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। রায় এদিন মানসের দলত্যাগের পেছনে ধান্দার রাজনীতি কাজ করেছিল বলে উল্লেখ করে বলেন, “ওনার বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হয়েছিল। যদিও ওটা মিথ্যা মামলা। উনি যদি পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতেন, গ্রেপ্তার হতেন তাহলে হিরো হয়ে যেতেন। মানুষ ওনাকে হিরো বলত কিন্তু উনি হিরো হতে চাননি, চেয়েছিলেন ধান্দা করতে।”
এদিন মানস প্রসঙ্গে বাম পরিষদীয় দল নেতা সুজন চক্রবর্তীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আপনারা মানস ভূইঁয়ার গড়ে এসে সভা করছেন। চক্রবর্তী বলেন ” কোথায় ওনার গড়? এখানে আজকাল আর ওনাকেই দেখতে পাওয়া যায়না। সবংয়ের বাইরে তো নয়ই। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যখন ছিলেন তখন দেখা যেত। এখন ওনাকে সাংসদ করে রেখে দেওয়া হয়েছে।”