নিজস্ব সংবাদদাতা: এক সপ্তাহ হয়নি পুলিশ কর্মীদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন পুলিশের শীর্ষ কর্তা। লকডাউনের দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর কর্তব্য পালন করতে করতে ধৈর্য্য টলে যাচ্ছে পুলিশ কর্মীদের। তার ওপর চূড়ান্ত অব্যবস্থা। ক্যান্টিনে ভাল খাবার নেই, অসুস্থ হয়েও ছুটি নেই, নেই পর্যাপ্ত পরিষেবা। আর সেকারনেই আমফানের মধ্যেই ঘটে গেছিল অঘটন। কলকাতা পুলিশের পিটিএসে এক কর্মী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও অন্য কর্মীদের সুরক্ষা-র দাবি সহ অতিরিক্ত ডিউটির অভিযোগে আক্রান্ত হতে হয়েছিল ডিসি কমব্যাটকে। ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ উত্তেজিত পুলিশ কর্মীদের সামলাতে দৌড়তে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর হাতে তাদেরই কমান্ডিং অফিসারের মার খাওয়ার সেই নজির বিহীন ঘটনার পর আবারও এই নজির বিহীন ঘটনার স্বাক্ষী রইল কলকাতা। সোমবার করোনা সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু ঘিরে দুপুরে ফের ব্যাপক ক্ষোভে ভাঙচুর চলল গরফা থানায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৪৭ বছর বয়সী গরফা থানায় কর্মরত ওই কনস্টেবল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। করোনা সন্দেহে তিনি-সহ তাঁর সংস্পর্শে আসা আরও ৪ জনকে হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তাঁদেরও শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। প্রথমে সকলেরই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
তবে শনিবার থেকে ফের প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন ওই কনস্টেবল। কিন্তু অভিযোগ, বারংবার অনুরোধেও তাকে ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। এদিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আরও বাড়তে থাকায় রবিবার তাঁকে এমআর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এর পরেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন থানায় কর্মরত পুলিশকর্মীদের একাংশ। তারা অভিযোগ করতে থাকেন, ওই পুলিশকর্মীকে আরও আগে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু উপরমহলের তরফে অনুমতি মেলেনি। ক্ষোভে ভাঙচুরও করা হয় থানার একাংশে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে থানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন বিক্ষোভকারী পুলিশ কর্মীরা।
এদিকে এই ঘটনা প্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিনহা তিনি বলেন, ‘‘গরফা থানার এক পুলিশকর্মীর আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ এসেছে।’’যদিও তাঁর সহকর্মীদের দাবি, করোনা আক্রান্ত হয়েই ওই পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আর জ্বর আক্রান্ত হলেও ওই পুলিশকর্মীকে মানবিকতার খাতিরে ছাড় দেওয়া উচিত ছিল।
ওই মৃত পুলিশকর্মীর ফের করোনা টেস্ট করানোর দাবিও তুলেছেন অনেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে শীর্ষ পুলিশকর্তারা অতিরিক্ত বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থল পৌঁছন। তারাই বুঝিয়ে প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে করো না সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বারবার প্রশাসনের সবচেয়ে শৃঙ্খলিত বাহিনী পুলিশের অসন্তোষ সরকারকে অপ্রস্তুত পরিস্থিতিতে ফেলছে, সে কথা বলাই যায়। এমনিতেই আমফানের পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের ব্যর্থতা নজরে পড়ার মত। ৬ দিন পরেও বিদ্যুৎ আর পানীয় জলের দাবিতে জেলায় জেলায় তো বটেই বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে কলকাতারই বিস্তীর্ণ এলাকা। তারমধ্যেই বারংবার পুলিশে বিদ্রোহ
কপালে ভাঁজ ফেলছে প্রশাসনের।
এই সরকারের আমলে বারংবার থানা আক্রান্ত হতে দেখা গেছে। ক্ষুব্ধ জনতা কিংবা শাসকদল লন্ডভন্ড করেছে থানা। শাসকদলের কর্মীদের দ্বারা থানা আক্রান্ত হওয়ার পর পুলিশ কর্মীদের দেখা গেছে প্রান ভয়ে টেবিলের তলায় লুকোতে, ফাইল দিয়ে মুখ আড়াল করতে। কিন্তু খোদ পুলিশের হাতেই থানা লন্ডভন্ড হওয়ার ঘটনার পর অশনি সঙ্কেত দেখছে অনেকেই।