নিজস্ব সংবাদদাতা: গোটা রেড জোনে সবুজের অহংকার হয়ে বসে ছিল কাঁথি মহকুমা। জেলার করোনার আঁতুড় ঘর এগরার গা ঘেঁসেও এতদিন যেখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি করোনা শুক্রবার সেই কাঁথিই যেন বজ্রাহতের মতই খবর শুনল যে শেষ অবধি জিতেই গেছে করোনা। চাঁদ সদাগরের মত আগলে রাখা অধিকারী পরিবারের সাঁতালি পর্বত কাঁথির লোহার বাসর ঘরেও ঢুকে পড়েছে করোনার কালনাগিনী। প্রায় ৫০ ছুঁই ছুঁই আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে রেড জোন পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথিই ছিল একমাত্র সবুজ মহকুমা যেখানে এই প্রথম প্রবেশ ঘটল করোনার।
শুক্রবার দিনটা শুরুই হয়েছিল খারাপ খবর দিয়ে। দিনের প্রায় শুরুতেই খবর আসে হলদিয়া মহকুমা মহিষাদল থানা এলাকায় করোনার সন্ধান মিলেছে। করোনায় জর্জরিত হলদিয়ার সঙ্গে প্রায় জড়াজড়ি করে থাকা মহিষাদলে এতদিন করোনার নামগন্ধ ছিলনা। অথচ পাশের হলদিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যাটা কুড়ি ছুঁতে চলেছে। সেই মহিষাদলেই খবর পাওয়া যায় এই পঞ্চায়েত সমিতির নাটশাল ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দক্ষিণ পূর্ব শ্রীরামপুর গ্রামের এক যুবকের শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই যুবকের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর শুক্রবার সকালেই তাকে পাঁশকুড়ার বড়মা কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
স্বাস্থ্য দপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মহিষাদলের দক্ষিণ পূর্ব শ্রীরামপুর গ্রামের ওই যুবক কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের একটি মিষ্টির দোকানে কর্মরত ছিলেন। লকডাউন শুরু হওয়ায় ওই যুবক আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। যার ফলে কলকাতাতেই থেকে যান ওই যুবক। এদিকে যুবককে বাড়ি ফেরানোর জন্য নিজের পরিজনরা চেষ্টা করলেও তা থেকে ব্যর্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে গত রবিবার একটি পোল্ট্রি ফার্মের গাড়িতে করে কলকাতা থেকে সোজা বাড়ি চলে আসেন দক্ষিণ-পূর্ব শ্রীরামপুর গ্রামের ওই যুবক। ওই যুবক বাড়ি ফিরে আসার পরই স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে সোমবার তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং করোনা পরীক্ষার জন্য লালা রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের হাতে ওই যুবকের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এই খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই গোটা এলাকায় ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকালে স্বাস্থ্য দপ্তর ওই যুবককে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে পাঁশকুড়ার বড়মা কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপরই খবর আসে কলকাতার আমরি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কাঁথির নয়াপুট গ্রাম পঞ্চায়েতের বলিয়ারপুরের বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তির করোনা পজিটিভ এসেছে। জানা গেছে, পেশায় পুরোহিত করোনা আক্রান্ত ওই ব্যক্তি পরিবার নিয়ে থাকতেন কাঁথি শহরের ক্যানেলপাড়ের ভাড়ারবাড়িতে। লকডাউন ঘোষণার পর পুজোপাঠ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত মাসেই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছিলেন। ৯ মে জ্বর হলে কাঁথির এক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাতে যান তিনি। জ্বর ভাল না হওয়ায় ১১ মে ভর্তি হয়েছিলেন কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে ওই দিন সন্ধেয় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়ার একটি হাসপাতালে। ১৩ তারিখ সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমরি হাসপাতালে। শুক্রবার লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ বলে নন্দীগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মহিষাদলের করোনা আক্রান্ত যুবকের পরিবারের ১২ জন সদস্যকে এবং কাঁথির করোনা আক্রান্ত পরিবারের ৩ সদস্যকে চন্ডিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মন্ডল। কাঁথির করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১১ মে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি। সে কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে হাসপাতালের কর্মীদের যাবতীয় সরকারি সতকর্তা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপার। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কাঁথি পুরসভার উদ্যোগে ক্যানেলপাড় এলাকা এবং নয়াপুটের বলিয়ারপুর এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারী। সবকিছু মিলিয়ে শুক্রবার জোড়া ধাক্কার কবলে পূর্ব মেদিনীপুর।