নিজস্ব সংবাদদাতা: অষ্টাদশ শতকে পাঞ্জাব কেশরী রনজিৎ সিংহ শিখ সাম্রাজ্যের মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। ইংরেজের নজর তখন পঞ্চনদের তীরে। বিপাশা বিতস্তা শতদ্রু চন্দ্রভাগার দিকে তাকিয়ে ইংরেজ শাসক ঝিলমের পাড়ে শিবির গেড়েছে। প্রতিদিন একটা একটা করে জায়গা দখল করেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। মহারাজা রনজিৎ সিংহ মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে থাকেন আর ইংরেজের দখল করা জায়গাগুলো লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করতে করতে একদিন বলেই ফেললেন,’সব লাল হো যায়গা।’ ইতিহাস বিখ্যাত সেই উক্তি আজ নতুন করে যেন আউড়ালো পুরুলিয়া।
জঙ্গলমহলের সবুজ পান্নার মুকুট পরে থাকা ঝাড়গ্রাম বাঁকুড়ার পরে পুরুলিয়াতেও ঢুকে পড়ল করোনা। এবং তা ঢুকে পড়ল পরিযায়ী এক শ্রমিকের আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে দিয়েই। যদিও ঘটনার ভয়াবহতা এটা নয়, ভয়াবহতা এটাই যে পাশের বাঁকুড়া এবং নদিয়া জেলায় ১২ এবং ১২ মোট ২৪ জন একই দিনে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে যারা এদের সিংহভাগই মহারাষ্ট্র ফেরৎ। বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় যে দুজনের করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছে তার মধ্যেও একজন মহারাষ্ট্র ফেরৎ। পশ্চিম মেদিনীপুরে সম্প্রতি যে ৮জন পরিযায়ী শ্রমিকের দেহে করোনা চিহ্নিত হয়েছে তার ৫ জনই মহারাষ্ট্র ফেরৎ আর ৩ জন দিল্লির। সম্প্রতি যে ট্রেনগুলি রাজ্যে ঢুকছে এর বেশিরভাগই আসছে পশ্চিম থেকে আর সেকারনেই এখন মাথা ব্যথা রাজ্যের কারন মহারাজা রনজিৎ সিংহের মতই এখন আতঙ্কের প্রহর গোনা, আতঙ্ক সব লাল হো যায়গা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাজ্যের বাইরে পরিযায়ী শ্রমিক? এক কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, রাজ্যের কাছে এর কোনও উত্তর নেই।
এ সরকার বিষয়টি নিয়ে কোনও দিন ভাবেই নি। হয়ত করোনা আর লকডাউন না হলে ভাবার অবকাশই ছিলনা। ২০১১ ক্ষমতায় আসার সময় মমতা ব্যানার্জী বলেছিলেন বটে যে এরাজ্যের বাইরে কাউকে কাজের সন্ধানে যেতে হবেনা কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার বিপরীত। যারা বাইরে থেকে আসছেন তাঁদের বেশিরভাগই বলছেন যে সর্বাধিক গত সাত আট বছরের মধ্যেই তাঁরা কাজে গেছিলেন। এরমধ্যে ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই কাজে গেছেন বেশি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ সহ সভাপতি তথা জেলার তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন, জেলার বিভিন্ন স্কুল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩৬ হাজার মানুষ। এরা সবাই যে রাজ্যের নির্ধারিত সীমানা পেরিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সামনে দিয়ে ঢুকেছেন এমনটা নয় বরং বেশিরভাগই নিজের মত করে ফিরেছেন এবং সিংহভাগেরই নমুনা সংগ্ৰহ হয়নি।
জেলার স্বাস্থ্যদপ্তরের চোখের সামনে পড়েছে এমন পরিযায়ীর সংখ্যা কাছাকছি ১৬হাজার আর এরমধ্যে প্রায় ১২হাজার জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছে। আর সেখানেও সমস্যা। জেলার প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার ক্ষমতা ৬০০টি। এরমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ করে ৪০০ আর কলকাতার ২টি ল্যাবে ২০০। প্রতিদিন গড়ে শ্রমিক ঢুকছেন ৮০০জন। নমুনা জমতে জমতে পাহাড়। প্রায় ৫হাজার নমুনা বকেয়া পড়ে। এই বকেয়া নমুনা পরীক্ষা করার জন্য আপাতত আপৎকালীন অবস্থা ছাড়া নমুনা সংগ্ৰহ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর তারই মধ্যে এখন প্রতিদিন ঢুকছে শ্রমিক স্পেশাল। আর এই ট্রেনের বেশিরভাগই দেশের সর্বাধিক করোনা আক্রান্ত জেলা গুলি থেকেই। ফলে অবস্থা কি শোচনীয় হয়ে পড়ছে তা সহজেই অনুমেয়।