নিজস্ব সংবাদদাতা: কখনও সোশ্যাল মিডিয়া আবার কখনও ফিসফাস করে গুজব চলছে। আজ এ পাড়া কিংবা কাল ও পাড়ায় করোনা ধরা পড়েছে। আজ অমুক মেস বন্ধ করে দেওয়া হল তো কাল তমুকের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হল কয়েকজনকে। ফেসবুকে,হোয়াটস্যাপে যেমন তেমন গুজব ছুটছে আর তাতেই প্রান ওষ্ঠাগত মেদিনীপুর শহর। শেষ অবধি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করল পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর দায়ে এ অবধি ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। কুমার জানিয়েছেন পুলিশের সাইবার সেল কড়া নজর রাখছে এই সব অপরাধীদের কাজকর্মের ওপর। কোনও ধরনের গুজব বরদাস্ত করা হবেনা।
পুলিশ কতটা গুরুত্ব দিয়ে করোনা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে তার প্রমান রবিবারের সাংবাদিক সম্মেলন। এমনিতেই সোশ্যাল ডিস্টেন্স বজায় রাখতে পুলিশ সুপার অফিসের বাইরে খোলা জায়গাতেই সংবাদিক সম্মেলন করছেন গত প্রায় দেড়মাস। রবিবার বৃষ্টির মধ্যেও কার্যত ভিজতে ভিজতে সম্মেলন করেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল বা ঘরের ভেতরে সরিয়ে নিয়ে যাননি।
করোনা পরিস্থিতে পুলিশ যে আরও কঠোর হচ্ছে এবং কোনও ভাবেই নিয়ম শিথিল করা হচ্ছেনা তা জানিয়ে দিয়ে বলেছেন মেদিনীপুর শহর বা জেলার কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে যেমন কেউ বের হতে পারবেন না তেমনই বাফার জোনে বাড়ির একজনই বের হতে পারবেন নির্দিষ্ট সময়ের (তিন ঘন্টা থেকে কমিয়ে দেড় ঘন্টা করা হয়েছে)জন্য। কে বাইরে যাবেন বাজার বা অন্য প্রয়োজনে তাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে বা হচ্ছে। পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিই যেতে পারবেন। প্রয়োজন হলে আর একজন। এর জন্য নির্দিষ্ট পাশ দেওয়া হচ্ছে। কাজের সুবিধার জন্য এই জোনের অন্তর্ভুক্ত বাড়িগুলিকে নম্বর সম্বলিত স্টিকার দিয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরফলে পুলিশের কাজের সুবিধা হবে।
দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, এখনও অবধি কার্ড পাশ দেওয়া হলেও যদি এই সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে পুলিশ মোবাইলে পাস দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। কোনও ভাবেই বাজার ঘাট ইত্যাদিতে অযাচিত ভিড় না হয়, মানুষ বিনা কারণে ঘোরাঘুরি না করে সেজন্যই এই ব্যবস্থা।
জেলায় এখনও অবধি ৬টি কন্টেনমেন্ট জোন এবং তাকে ঘিরে বাফার জোন রয়েছে এরমধ্যে মেদিনীপুর শহরে দুটি, খড়গপুরে দুটি কন্টেনমেন্ট জোন রয়েছে। যদি প্রয়োজন মনে হয় তবে কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বাড়ানো হবে এবং শীঘ্রই এ বিষয়ে মিটিং হবে বলে কুমার জানিয়েছেন। বাফার জোন ও কন্টেনমেন্ট জোনের কেউ চাইলে হোম ডেলিভারির সুযোগ নিতে পারবেন। পুলিশ সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। কন্টেনমেন্ট জোনে কোনও দোকান খোলা থাকবেনা আর অধিবাসীরা বাইরে বেরুতে পারবেননা তাই এই ব্যবস্থা।
এদিকে ক্ষীরপাইয়ের বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি যে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেই নির্নয় হাসপাতালের একজন নার্সও আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানকার রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নির্ণয়ের ১০৭জন স্বাস্থ্যকর্মীকে কঠোর ভাবে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে এবং এঁদের প্রত্যেকেরই করোনা পরীক্ষা করা হবে। এই হাসপাতালটির পরিধিতে আরও একটি কন্টেনমেন্ট জোন ও তাকে ঘিরে বাফার জোন হতে পারে বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।