নিউজ ডেস্ক: শেষ মেষ টলমল আসনে ধস! পদুচেরিতে পতন হল সরকারের আস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমানের অভাব; আস্থা ভোটে হেরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগেই ৩৩ আসনের বিধানসভায় শাসক জোট কংগ্রেস-ডিএমকের শক্তিক্ষয় হয়। ১১জন বিধায়ক সংখ্যা নিয়ে আস্থা ভোটে হার নিশ্চিত ছিল সরকারের। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলি নতুন সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে নাকি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
বিরোধীদের সংখ্যা ছিল ১৪। রবিবার দুই কংগ্রেস বিধায়ক পদত্যাগ করেন। আস্থা ভোট চলাকালীন ওয়াকআউট করেন কংগ্রেস বিধায়করা। রবিবার পদত্যাগ করেন কংগ্রেস বিধায়ক লক্ষ্মীনারারণ। দলে নিজের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। কাজ করতে পারছেন না। তিনি কংগ্রেসের চারবারের নির্বাচিত বিধায়ক। কিন্তু তাঁকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে, তাঁর পদত্যাগের পর পুদুচেরিতে ২৬টির মধ্যে কংগ্রেসের হাতে ছিল মাত্র ১২টি আসন। সম্প্রতি পুদুচেরির কংগ্রেস বিধায়ক এ জন কুমার পদত্যাগ করেন। এরপরেই কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। জন কুমারের পদত্যাদের পর পুদুচেরির ৩৩ আসনের বিধানসভায় কংগ্রেস-ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে-বিজেপি দুই জোটেরই বিধায়ক সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৪। কিন্তু, দুই বিধায়কের পদত্যাগের পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় শাসক জোট।
জনকুমার ২০১৯ সালে উপনির্বাচনে কামরাজনগর থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তার এই পদত্যাগের ফলে কংগ্রেস সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংকটে পড়ে যায়। যদিও ভি নারায়ণস্বামী আত্মবিশ্বাসী ছিলেন এই অবস্থাতেও। তিনি দাবী করেন, তাঁদের সরকার আদৌ সংখ্যালঘু হয়ে পড়েনি। যদিও খুব একটা মিলল না তাঁর আত্মবিশ্বাস, সেটা এখন প্রমাণিত।
এদিন যেসব কংগ্রেস বিধায়করা পদত্যাগ করেছেন, তারা মানুষকে কি জবাব দেবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। দলত্যাগী বিধায়কদের স্বার্থান্বেষী বলেও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই ভোট দেওয়ার অধিকার নিয়ে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী সহ শাসক দলের বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণস্বামী রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছেন বলে জানালেও স্পিকার ভিপি শিবাকোঝুন্ডু ঘোষণা করেন, নারায়ণস্বামীর সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে কংগ্রেসের জোট সরকারের পতন হয়েছে বলেই ধরা হবে।
সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দররাজনের সঙ্গে দেখা করেন ও তাঁর হাতে পদত্যাগ পত্র তুলে দেন। রাজভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “স্পিকারের বিধান সম্পূর্ণ ভুল। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকায় এনআর কংগ্রেস ও এআইএডিএমকে মনোনীত তিনটি আসনের ভোট ব্য়বহার করে আমাদের সরকার ভাঙার প্রচেষ্টা করেছে। এটা গণতন্ত্রের হত্যা। পুদুচেরি ও দেশের মানুষ তাঁদের উচিৎ শিক্ষা দেবে।”
এর আগে, ১৭ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির বার্তা সচিব অজয় কুমার সিং এক বিবৃতির মাধ্যমে জানান, ড: কিরণ বেদী আর পুদুচেরির উপ-রাজ্যপাল পদে থাকছেন না। তার বদলে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল ড: তামিলিসাই সৌন্দারাজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পুদুচেরির উপ-রাজ্যপাল হিসেবে কাজ করবেন যতদিন না পর্যন্ত নতুন কাউকে পুদুচেরির উপ-রাজ্যপাল পদে স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পুদুচেরি রাজ্যের ৩০ জন বিধায়কের মধ্যে ১৪ জন কংগ্রেস বিধায়ক, এ ছাড়া ডিএমকের ২ জন ও নির্দল একজনকে মিলিয়ে ম্যাজিক ফিগার ১৬ পার করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু ৪ জন বিধায়ক কিছুদিন আগে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় কংগ্রেস। ফলে ভোট বাক্সে ভাগ্যপরীক্ষার আগেই ভি নারায়ণস্বামীর সরকার পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আর সেই আশঙ্কাই শেষমেষ সত্যি হল।