নিজস্ব সংবাদদাতা: বঙ্গের শিল্পী সাহিত্যিক থেকে শুরু করে তাবৎ বিদ্দজ্জনের একটি আক্ষেপ রয়েই গেছে যে কলকাতা মহানগরে প্রতিষ্ঠিত না হলে তাঁর কোনও মূল্য নেই। রাজনৈতিক নেতাই হন আর সুলেখক যদি কলকাতা স্বীকৃতি না দেয় তাহলে জেলা কিংবা মফঃস্বলেই তাঁর বিস্তারের গন্ডি। এই একই কথা যদি ‘রাজনৈতিক’ শহিদদের উদ্দেশ্যে বলা হয় তাতেও বোধহয় খুব একটা অত্যুক্তি হয়না। অন্ততঃ এমনটাই দাবি করেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানার পলাশচাবড়ি এলাকার ভালুককুন্ডু গ্রামের তিনটি পরিবার। ২০০১ সালে এই গ্রামেই খুন হয়েছিলেন তৃনমূল নেতা রাজু কোটাল এবং তাঁর দুই সহযোগী তৃনমূল কর্মী অভিজিৎ ভুক্তা ও তরুণ মাঝি। সেই নিহত নেতা রাজু কোটালের স্ত্রী জানাচ্ছেন, “এখন ডাকলেও আর ২১শে জুলাইয়ে যাইনা। গেলে শুধু একটা শাড়ি দিয়ে ছেড়ে দেবে। ক্ষমতায় আসার আগে দল বলেছিল, এই করে দেবে, সেই করে দেবে। ক্ষমতায় আসার পরও রেশনের চাল আর লোকের বাড়ি কাজ করেই জীবন কাটে।”
ঘটনার ২০বছর পর আরেক ২১শে জুলাই যখন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বার বাংলার মসনদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যখন তৃনমূল তাঁকে সামনে রেখেই দিল্লির দিকে চোখ রাখছে তখন রাজু কোটালের স্ত্রী অসীমা কোটাল জানাচ্ছেন, ” ভালোবেসে রাজনীতি করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন আমার স্বামী। সিপিএমের হার্মাদরা গুলি করে মেরেছিল তাঁকে। আর এখন পকেট ভরছেন আমাদের নেতারা। আমরা যে তিমিরে সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছি। কেউ আমাদের দিকে ফিরেও তাকায়না।”
২০ বছর আগে তৃনমূল কংগ্রেসের তরফে শহিদের তকমা পাওয়া পরিবারগুলিকে নিয়ে ক্ষমতায় আসার আগে রাজ্যপাল থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অবধি দৌড়েছে তৃনমূলের রাজ্য নেতারা। শুনিয়েছেন ক্ষমতায় আসলে হালবদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। কিন্তু ক্ষমতায় আসার ১০বছর পরেও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দুঃখের বারোমাস্যার অন্ত হয়নি।
রাজুর বৃদ্ধ এবং প্রায় অথর্ব হয়ে পড়া বাবা মায়ের অভিযোগ,২০ বছর কেটে গেলেও রেশনের চাল,বার্ধক্য ভাতা আর লোকের ঘরে কাজ করে কোনক্রমে দিন কাটছে,কেউ খোঁজই নেয়না আর।সরকারি কোনও সাহায্য বা দলের তরফে কোনও ক্ষতিপূরণও মেলেনি। আর এরপরই রাজুর স্ত্রী ক্ষোভে ফেটে পড়ে জানান,” সংসার চালানোর কোনও আর্থিক সংস্থান নেই। স্বামীর প্রাণ গেছে আর নেতাদের পকেট ভরছে।দলের তরফে বা সরকারি ভাবে কোনও বৃহৎ সুযোগসুবিধা মিলেনি এখনও পর্যন্ত। প্রতিবছর শহীদ দিবসের দিন তাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে একটি করে নতুন কাপড় তুলে দেওয়া হয় ওইটুকুই।এখন আর ডাকলেও যাইনা।”
রাজু কোটালের মতই একই অবস্থা ‘শহিদ’ অভিজিৎ ভুক্তা ও তরুণ মাঝির পরিবারের। তাঁরা অভিযোগ করেছেন আমাদের পাশে দাঁড়ানো তো দুরের কথা তিনজনের নামে তিনটি শহিদ বেদী তৈরি করা হলেও ২০বছর পেরিয়ে গেলেও তাতে তিনজনের নাম লেখারই সময় পায়নি দলের নেতারা। উল্লেখ্য ২১শে জুলাইকে সামগ্রিক ভাবে শহিদ দিবস হিসাবে পালন করে তৃনমূল কংগ্রেস। শুধু ২১শে জুলাই-ই নয়, অন্য যে সমস্ত তৃনমূল কর্মী সমর্থক বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষ অথবা প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হয়েছেন তাঁদের সবাইকেই স্মরণ করা হয় এই ২১শে জুলাই। এই তিন পরিবার জানিয়েছে ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় এসে তাদের নাম নথিভূক্ত করে এবং রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ হারানো জেলার শহীদদের তালিকাতেও নাম রয়েছে বলে দলের তরফে জানানো হয়।
বিষয়টি নিয়ে চন্দ্রকোনা ২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জগজিৎ সরকারের দাবি , “দল ওই পরিবারগুলিকে দেখেনি এটা ঠিক নয়। আমরা সর্বোত ভাবেই পরিবারগুলির পাশে থাকার সবরকম প্রচেষ্টা নিয়ে থাকি। তারপরেও জেলা মারফৎ আমরা দলনেত্রীর কাছে আবেদন জানাবো যাতে করে আরও বড় কোনও সুযোগ সুবিধা, স্থায়ী সংস্থান ওই পরিবারগুলি পেতে পারে সেই ব্যাপারে।”