Homeএখন খবরবুলবুলের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ালো সুন্দরবন চর্চা ও তেপান্তর

বুলবুলের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ালো সুন্দরবন চর্চা ও তেপান্তর

নিজস্ব সংবাদদাতা: সুন্দরবনের একটা বড় অংশে বুলবুল এর ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে আছে জনজীবন ৷ গাছপালা ভেঙে পড়ে রাস্তা বন্ধ, অধিকাংশ বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে, ভিজে গেছে গৃহস্থালীর জিনিসপত্র৷ এবারের ঝড়ের ধরন ছিল একটু অন্যরকম। প্রায় ছয় ঘন্টা ধরে ১৩৫ কিমি বেগে তান্ডব চালিয়েছে নামখানা ও পাথরপ্রতিমা ব্লকে।

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
যেটা আয়লাতেও হয়নি। ফলে দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বকখালি, মৌসুনি সহ সুন্দরবনের জি প্লট। বর্তমানে মানুষের প্রতিদিনের বেঁচে থাকা বহুগুণ কষ্টকর হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গবেষক , লেখক “শুধু সুন্দরবন চর্চা”রসম্পাদক জ্যোতিরিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী বলেন ,ঝড়ের গতিবেগ ভয়ঙ্কর থাকলেও আয়লার তুলনায় বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতি একটু অন্য ধরনের৷ তার কারণ—–

“প্রথমত, আয়লার সময় থেকে আজ কেটে গেছে দশ বছর। ফলে যোগাযোগ ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবী এগিয়ে গেছে অনেকটাই৷ অনেক দিন আগে থেকেই মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়ার গতি অনেক দ্রুত হয়েছে৷
দ্বিতীয়ত, আয়লার সময় নদীতে ছিল ভরা জোয়ার, ফলে নদী বাঁধের উপর আছড়ে পড়া জলের চাপ ছিল অনেক বেশি৷ এই কারণে এইবারে সুন্দরবনে নদী বাঁধের ক্ষতি তুলনামূলক ভাবে কম হয়েছে৷

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তৃতীয়ত, স্থলভাগ স্পর্শ করার পরে আয়লার গতিপথ ছিল দক্ষিণ থেকে উত্তরে, সুন্দরবনকে অতিক্রম করে আয়লা এসে পৌঁছেছিল কলকাতায়৷ বুলবুলের মূল গতিপথ কিন্তু ছিল পশ্চিম থেকে পূর্বাভিমুখী এবং সে অগ্রসর হয়েছে অনেকটাই ধীর গতিতে৷ ফলে অনেক বেশিক্ষণ সুন্দরবনের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল বুলবুল৷ মৌসুনি যাওয়ার শাসমল ঘাটে দাঁড়ানো বৃদ্ধ অনুকূল জানাও বলছেন এতখানি বয়স পর্যন্ত এমন ঝড় কখনও দেখেননি, তার কারণ এইটাই৷ ঝড় চলেছে সন্ধ্যে ছ’টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত৷

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
চতুর্থত, ক্ষতিগ্রস্ত গোটা সুন্দরবন জুড়ে যে অসংখ্য ভেঙে পড়া গাছ দেখা যাচ্ছে, তারও একটা বাস্তব কারণ আছে৷ দশ বছর আগের আয়লা সুন্দরবন অঞ্চলের প্রায় সব বড় গাছকে ধরাশায়ী করেছিল৷ এখন যে গাছগুলো ভেঙেছে, তাদের অধিকাংশেরই বয়স দশ বছর বা তার কম৷ তাই মাটির নীচে শিকড় ছড়ানোর মতো পর্যাপ্ত সময় তারা পায়নি৷ ফলে প্রবল ঝড়ের ধাক্কায় তারা ভেঙে পড়েছে সহজেই৷

সব শেষে এটা মনে রাখার, যে সুন্দরবনের সাধারণ মানুষ যাঁরা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে তাঁদের সহবাস বহুদিনের৷ মাস ছয়েক আগে আমরা যখন মুন্নিদের বাড়িতে বসে মুড়ি খেতে খেতে বাড়িতে কত জন মানুষ আছেন, কী করে তাঁদের সময় কাটে– এসব কথা শুনছিলাম, তখন সার ভাটা চলছে৷ এর আগে দু’বার এসেও আমরা ফিরে গেছি বাড়ির সামনে থেকে৷ কারণ আগের দু’বারই এসেছিলাম ভরা জোয়ারে৷ দ্বীপের মতো ভেসে থাকা বাড়িতে কোমর সমান জল ভেঙে ঢুকতে পারার মত সাহস অর্জন করতে পারিনি৷ ”

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তাই সীমিত আর্থিক ক্ষমতা নিয়ে “শুধু সুন্দরবন চর্চা” পত্রিকা ও “তেপান্তরের স্বপ্ন” সংস্থার পক্ষ থেকে বুলবুল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৌসুনী দ্বীপের ৯০ টি পরিবারের ৫৪১ জন গ্রামবাসীদের নতুন জামা কাপড় ও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হল সম্পাদক জ্যোতিরিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ীর নেতৃত্বে। সাথে ছিলেন বিশিষ্ট নদী বিজ্ঞানী কল্যাণ রুদ্র, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বরেন্দু মন্ডল।

অন্যান্য বিশিষ্টজনেদের উপস্থিতি ছিলেন তেপান্তরের স্বপ্ন পত্রিকার সম্পাদিকা সৃজনী লাহিড়ী, গৌরী রুদ্র, অঞ্জন নন্দী, শুভদীপ অধিকারী, অরবিন্দ সর্দার, সুমিতা ব্যানার্জী, অমিতাভ ব্যানার্জি, কনাদ ভট্টাচার্য, সুজন বেরা, অনাথ মৃধা, অভিজিৎ চক্রবর্তী, কৌশিক চ্যাটার্জী, উজ্জ্বল সর্দার, তমোনাশ দত্ত, পাপিয়া নন্দীনাগ, অনির্বান ভট্টাচার্য, ও রিঙ্কু চক্রবর্তী।
এছাড়াও মৌসুনী কোপারেটিভ হাই স্কুল এ প্রায় ৩০০ অধিক ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে অঙ্কন, প্রবন্ধ ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এইরকম পরিস্থিতির মধ্যেও সুন্দরবন বিষয়ে প্রতিযোগিতায় ছাত্র ছাত্রীদের  উৎসাহমূলক যোগদান ছিল নজরকাড়া

RELATED ARTICLES

Most Popular