Homeএখন খবরপনের জন্য খুন বোনকে, শালবনীতে পুলিশ ভগ্নিপতি ও তার ঠিকাদার দাদা ,তৃনমূল...

পনের জন্য খুন বোনকে, শালবনীতে পুলিশ ভগ্নিপতি ও তার ঠিকাদার দাদা ,তৃনমূল কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ মৃতার দাদার, আটক ৩

নিজস্ব সংবাদদাতা: বিয়ের পর থেকেই ৩লক্ষ টাকা পন চেয়ে ধারাবাহিক অত্যাচার করা হত বোনকে আর সেই অত্যাচারে ফলেই মারা যাওয়া গৃহবধূকে জলে ফেলে দিয়ে নিখোঁজ দেখানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের  শালবনির রঘুনাথপুর গ্রামে বাড়ির অদূরেই একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার হওয়া মৃত গৃহবধূর দাদা এমনই অভিযোগ দায়ের করেছেন শালবনী থানায়। অভিযোগ ওই গৃহবধূর স্বামী পুলিশের এ.এস.আই ও তাঁর দাদা স্থানীয় তৃনমূল নেতা ও ঠিকাদার সহ পরিবারের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে।

উল্লেখ্য বুধবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই গৃহবধূর দেহ উদ্ধার হয় বৃহস্পতিবার সকালে একটি জলাশয় থেকে স্থানীয় ভাবে বড়বাঁধ বলেই পরিচিত। স্থানীয়দের দাবি মৃতার মুখে দাগ ও রক্তের চিহ্ন ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত গৃহবধূর নাম মোনালিসা (ঘোষ) মাইতি (৩০)। মৃত গৃহবধূ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোতয়ালি থানায় কর্মরত পুলিশকর্মী (এএসআই) জয়ন্ত মাইতির স্ত্রী। পুলিশ কর্মীর পরিবারের দাবি বুধবার সন্ধ্যে থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই গৃহবধূ যার দেহ উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১০ ঘন্টা পরে রায়গড় শিব মন্দিরের পাশের বড়বাঁধ থেকে।

গৃহবধূর বাপের বাড়ি বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানার বড় গাডরা গ্রামে। বাপের বাড়ির অভিযোগ, ‘পরিকল্পনা মাফিক খুন করে বাঁধের জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে।”
মৃত মোনালিসার দাদা সুমন ঘোষের দাবি বুধবার রাত ৮ টা নাগাদ ভগ্নিপতির ফোন মারফৎ তাঁরা খবর পান বোন নিখোঁজ হয়েছে। তারপরই সুমন নিজে ও কয়েকজন আত্মীয় মিলে শালবনী আসেন। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় যেখান থেকে বোন নিখোঁজ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সেখানে কিন্ত বাড়িতে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। তাঁরা সারেঙ্গা ফিরে যান। ফের বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টায় তাঁদের দেহ পাওয়ার খবর দেওয়া হয়। তাঁরা ছুটে আসেন এবং দেখেন বোনের মুখে ক্ষত, নাক দিয়ে রক্ত ঝরার দাগ রয়েছে।

অভিযোগ পত্র দায়ের করে সুমন দাবি করেছেন, “বোনের পরিবারের দাবি মত ৩ লক্ষ টাকা তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় এটা তাঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই লাগাম ছাড়া হয় অত্যাচার। বোন সে কথা আমাদের জানিয়েও ছিল। আমরা তা নিয়ে কথা বলতে গেলে কিংবা পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা বললেই ভগ্নিপতি পুলিশ কর্মী জয়ন্ত ও তাঁর ঠিকাদার তথা তৃনমূল নেতা দাদা অচিন্ত্য মাইতি আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিত। বাধ্য হয়ে আমরা চুপ করে গেছিলাম।”

সকালে শালবনিতে বোনের মৃতদেহ দেখার পর সুমন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, বোনকে খুন করে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সুমন অভিযোগ করেন, ‘ বোনের ওপর ধারাবাহিক একটা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চলত। চার বছর আগে আমরা সম্বন্ধ করেই বোনের বিয়ে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর থেকে অশান্তি ছিল। তাকে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার কথা বলে অত্যাচার করা হত। এমনকি বোনকে পাড়ার লোকজনের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতে দেওয়া হতনা, পাছে জানাজানির হয়ে যায়।”

সুমনের আরও দাবি, ” বোনের ছেলের বয়স এক বছর আট মাস। তাকেও মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে রাখা হত। পরিবারের সবাই পরিকল্পনা করে বোনকে খুন করে জলে ফেলে দিয়েছে।”
সুমন বলেন,” ভগ্নিপতি পুলিশ আর তাঁর দাদা অচিন্ত মাইতি স্থানীয় তৃণমূল কর্মী। এলাকার ঠিকাদারী করেন। ভগ্নিপতি এতটাই প্রভাবশালী যে, বছরের পর বছর মেদিনীপুর কোতয়ালি থানাতেই পোস্টিং। আমরা চাই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।”

জয়ন্ত পরিবারের দাবি, বুধবার সন্ধ্যের কিছু আগে মোনালিসা তাঁর ভাশুরের স্ত্রী পম্পার সঙ্গে মাঠের দিকে গিয়ে ছিলেন। সন্ধ্যের মুখে পম্পা ফিরে এলেও মোনালিসা ফিরে আসেনি। পরে যাচ্ছি বলে জা’কে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর দীর্ঘক্ষন সে না ফেরায় পরিবারের লোকেরা ওই মাঠে বা পুকুর ধারে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেও খুঁজে পাননি। পরে গ্রামবাসীদের একাংশও গিয়ে খোঁজ শুরু করে। কিন্তু মোনালিসাকে পাওয়া যায়নি। মোনালিসার স্বামী জয়ন্ত মেদিনীপুর কোতয়ালিতেই কর্তব্যরত ছিলেন। খবর পেয়ে রাতে বাড়ি ফেরেন। রাতেই শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন। খবর পেয়ে সারেঙ্গা থেকে রাতেই শালবনিতে আসেন মোনালিসার দাদা সুমন ঘোষ ও তাঁর প্রতিবেশীরা। রাতেই তাঁরা ফিরেও যান।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার পুলিশ কর্মী জয়ন্ত মাইতি। তিনি জানিয়েছেন, আমার স্ত্রীর মানসিক সমস্যা ছিল। চিকিৎসা চলছিল। পরিবারের বিরুদ্ধে অত্যাচারের যে কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তি হীন কারন আমার স্ত্রী আমার সাথে মেদিনীপুর শহরেই থাকতেন। কিছুদিন হল লকডাউনের পর শালবনীর বাড়িতে ছিলেন।”
জয়ন্ত আরও বলেন, ” আমাদের পরিবারের সদস্যরা বিকেলে বাড়ির পাশে নিজেদের জমির দিকে যায়। বুধবারও তেমনি গিয়েছিল। তারপর আর বাড়ি ফিরেনি। তখন আমি থানায় ডিউটিতে ছিলাম। খবর পেয়ে রাতে বাড়িতে আসি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পায়ি। সকালে বাঁধের জলে ভেসে থাকতে দেখা যায়। জয়ন্ত বলেন, বাড়িতে কোন সমস্যা ছিলনা। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল জানিনা।” জয়ন্তর প্রতিবেশীদের একাংশও এই ঘটনার মধ্যে রহস্য খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদেরও বক্তব্য গৃহবধূকে প্রতিবেশীদের সাথে মিশতে দেওয়া হতনা। প্রতিবেশীরা এও জানিয়েছেন, মোনালিসার ওপর অত্যাচার হত।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৃতার দাদা সুমন ঘোষ পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত তাঁর দাদা অচিন্ত্য, অচিন্ত্যর স্ত্রী মৌমিতা ওরফে পম্পা, জয়ন্তর বাবা গোবিন্দ, মা কল্পনা ও এক আত্মীয় নিশীথের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। রাতেই জয়ন্ত, পম্পা ও কল্পনাকে আটক করেছে পুলিশ। বাকিরা পলাতক বলেই জানা গেছে।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ‘মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আমরা অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখছি। তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’

RELATED ARTICLES

Most Popular