Homeএখন খবরদিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে সুজাতা, খিল্লিতে ভরে উঠেছে ফেসবুক, মুখ লুকোনোর জায়গা...

দিল্লি থেকে বিশেষ বিমানে সুজাতা, খিল্লিতে ভরে উঠেছে ফেসবুক, মুখ লুকোনোর জায়গা খুঁজছে বিজেপি

নিজস্ব সংবাদদাতা: ৭ ই এপ্রিল রাস্তায় না খেতে পেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২৯বছরের গৃহবধূ গঙ্গাম্মার। দুই সন্তানের জননী নির্মান শ্রমিক ব্যাঙ্গালুরুর থেকে ৩০০কিলোমিটার পথ হেঁটে নিজের বাড়ি থেকে রায়চুর ফিরছিলেন। মাত্র তিনদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে ছত্তিশগড়ের ১২বছর বয়সী কন্যা শ্রমিক জমললো মকদমের। তেলেঙ্গানার লঙ্কা ক্ষেতের কাজ হারিয়ে ১৭০কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দুরে লুটিয়ে পড়েছে সে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের দল পথ হাঁটছে আর হাঁটতে হাঁটতে ইতিমধ্যেই মৃত্যু ছাড়িয়েছে অর্ধশত। মরছে তবু হাঁটছে কারন ঘরে ফেরা ছাড়া গতি নেই। নেতাদের ভাষনে যত দম, রেশনে তত গতি কই? আর এরই মধ্যে দিল্লি থেকে বিশেষ বিমান যোগে কলকাতায় ফিরে নেটিজেনদের তীব্র খিল্লির মুখে বাঁকুড়ার একদা তৃনমূল নেতা বর্তমানে বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খানের স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খান।

বুধবার বিকালে বিশেষ বিমানে দিল্লি থেকে উড়ে এসেছেন সুজাতা। আর তারপর প্রায় ফাঁকা বিমানে বসে থেকে কয়েকটি সেলফি তুলে পোষ্ট করে বলেছেন, ”বাড়ি ফেরার আনন্দই আলাদা।” আর তারপরই ঝড় বইছে ফেসবুকে। যার বেশির ভাগই সেই হাজার হাজার পথ হাঁটা শ্রমিককে মনে করিয়ে দিয়ে তীব্র কটাক্ষ। কেউ কেউ সেই বুভুক্ষু শ্রমিকদের হাঁটার ছবিও পোষ্ট করেছেন সুজাতার ওয়ালে। কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ” যখন দেশের ওই মানুষগুলো শত শত কিলোমিটার নিজেদের বাড়িতে ফেরার জন্য পথ হাঁটছে তখন তাঁদের ফেরানোর কোনও উদ্যোগ না নিয়ে মোদিজী আপনার জন্য বিশেষ বিমানে ব্যবস্থা করে দিল?”
সুজাতা যখন তাঁর ওয়ালে লিখছেন, ‘ঘরে ফেরার মজাই আলাদা, কলকাতা সিটি অফ জয় এবং দিল্লি দিলওয়ালে কি….’ তখন কেউ কেউ বলেছেন, ঘরে ফেরার মজা আপনি টের পাবেন যখন ওই হাজার হাজার শ্রমিকের সাথে শত শত মাইল পথ হাঁটবেন। আপনি একজন জনপ্রতিনিধির স্ত্রী, দেশের জনতার কথা আপনি ভুলে গেলেন?”

কেউ আবার লিখেছেন, ” আপনি মানুষের যন্ত্রনার কথা কী করে জানাবেন, যন্ত্রনা আপনি বুঝতেন যদি আমার জায়গায় থাকতেন, আমার স্বামী ইংল্যান্ডে লকডাউনের জন্য কাজ হারিয়ে সে দেশের আটকে রয়েছেন।” সুজাতা নিজে অবশ্য চুপ করে থাকেন নি প্রথম দিকে তিনিও পাল্টা মন্তব্য করেছিলেন, ” দেখ হাতি চলে বাজার আর কুত্তা ভুকে হাজার। সে রকম আমার সাথে না পেরে তৃনু মাল গুলো কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করবে সেটাই স্বাভাবিক।” সুজাতার এই জবাবের পর তাঁর ওয়াল উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আরও।
ব্যক্তিগত ভাবে সুজাতার ক্যারিশমা নিঃসন্দেহে জ্বালাতনে ফেলেছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। বিজেপির প্রার্থী হওয়ার পর শাসক দলের রোষে পড়ে বিষ্ণুপুর ঢুকে প্রচারই করতে পারেননি সৌমিত্র। মামলায় জেরবার হয়ে নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র থেকে দুরেই থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেই দারুন দুঃসময়ে তৃনমূলের সৃষ্টি নানা রকম বাধা বিঘ্ন উপেক্ষা করেই স্বামীর জয় ছিনিয়ে এনেছিলেন তিনি।

এই সাফল্য তাঁকে বিজেপিতেও তারকা করে তুলেছে। আর সেই কারনেই হয়ত দিল্লি থেকে আসা স্পেশাল বিমানে তাঁর আসন নিশ্চিত হয়েছে এই দুর্দিনেও। দুর্ভিক্ষের বাজারে অনেকেই খেতে পাচ্ছেনা বলে যার সামর্থ্য আছে তিনি খাবেননা এমনটা নয় কিন্তু অনৈতিক এমন কি অপরাধ হল সেই বুভুক্ষু মানু্ষের সামনে বসে খাওয়া। ঠিক তেমনই লক্ষ লক্ষ পথ হাঁটা মানু্ষের ছবির মধ্যে নিজের বিমান যাত্রার ছবিটা গুঁজে দেওয়াটা ঠিক হয়নি বলেই মনে করছেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা আর সে কারনে সুজাতার সমর্থনে তাঁর ফলোয়ার্সদের তেমন করে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি।   ছবি সৌজন্য : সুজাতার ফেসবুক 

RELATED ARTICLES

Most Popular