Homeএখন খবরমন্ত্রীর গ্রামেই মেরে পা ভেঙে দেওয়া হল এক শিক্ষক সহ দুই বিজেপি...

মন্ত্রীর গ্রামেই মেরে পা ভেঙে দেওয়া হল এক শিক্ষক সহ দুই বিজেপি নেতার, পিংলায় ফের বর্বরতা

নিজস্ব সংবাদদাতা: সীমাহীন রাজনৈতিক বর্বরতার স্বাক্ষী থাকল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার গ্রাম পিন্ডরুই। এক শিক্ষক সহ দুই বিজেপি নেতার পা ভেঙে দেওয়া হল, তৃনমূল কর্মীদের বেধড়ক মারে জখম হয়েছেন বিজেপির স্থানীয় মন্ডল সভাপতিও।

গোড়ালি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে

বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “এই হল মমতা ব্যানার্জীর বাংলা যেখানে বিরোধী দল করার অপরাধে রেয়াত করা হয়না শিক্ষককেও।” অন্যদিকে এই ঘটনা অস্বীকার করে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ফল বলা হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকালে। পিন্ডরুই রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের জন্মভূমি, মন্ত্রী এই এলাকার বিধায়কও বটে। পিংলা পূর্ব মন্ডলের সভাপতি তপন শী যিনি নিজেও আহত জানিয়েছেন, ” এদিন দুপুর থেকেই তান্ডব শুরু করেছিল তৃণমূলের বাহিনী। আমাদের এক কর্মী স্বপন জানাকে আমাদেরই পার্টি অফিস থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয় তৃণমূলের পার্টি অফিসে। খবর পেয়ে বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানাই। পুলিশের একদল কর্মী গ্রামে আসে ওই কর্মীকে উদ্ধার করতে।

বেছে বেছে পায়েই মারা হয়েছে ভাঙার উদ্দেশ্যে

পুলিশ ছিল বলেই আমরা সাহস পাই। দুই সহ সভাপতি সহ আমি পিন্ডরুই গ্রামে যাই। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতেই আমাদের ঘিরে ফেলে তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী। একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে বাঁশ, লাঠি, রড ইত্যাদি দিয়ে বেধড়ক মারা হয় আমাদের। আমাদের দুই সহ সভাপতির পা পরিকল্পিত ভাবে ভেঙে দেওয়া হয়।”

সংশ্লিষ্ট মন্ডলের সহ সভাপতি ঘাটালের একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক নীলাদ্রি পাইক জানান, ” গত ২১ শে জুলাই এই গ্রামে মন্ত্রী এসেছিলেন দলের ভার্চুয়াল সভায়। সেখানেই তিনি আমার এবং আরও একজন শিক্ষকের নাম করেই বলে গিয়েছিলেন যে আমাদের হাত পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। মন্ত্রীর লোকেরা সেই কথা রেখেছেন। ১০ থেকে ১২জন তৃণমূলী গুন্ডা নীহার মহাপাত্র ও কৃষ্ণচন্দ্র বেরা সহ সুদর্শন সামন্ত, বীরেন মাইতিদের নেতৃত্বে শুধু আমার  পা লক্ষ্য করে মেরে গেছে। অন্ততঃ ৫০ বার মারা হয়েছে আমার  পায়ে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পা ।”

পাইক আরও বলেন, “আমি সুগারের রুগি। এই গ্রামে আমার বাড়ি হলেও পেশাগত কারনে হাউরে থাকি। এই গ্রামের কালী পুজার সম্পাদক আমি। একটা ওষুধ হাউরে পাওয়া যাচ্ছিলনা বলে ওষুধ নেওয়ার দরকার ছিল আর পুজোর হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার ছিল। এমনিতে গ্রামে আসতে পারিনা তৃণমূলের দাপটে আর মন্ত্রীর হুমকিতে। বুধবার পুলিশের ভরসায় এসেছিলাম।”

অভিযোগ ঠিক একই ভাবে মেরে ফেলে রাখা হয়েছিল আরেক সহসভাপতি কার্তিক মাইতিকে। তাঁরও পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দুজনেই দেড় ঘন্টারও বেশি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন রাস্তার ধারে। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাঁদের। গোটা ঘটনায় হতভম্ব শিক্ষকের নাবালক সন্তান সহ পরিবার। এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের আগে হয়নি। বৃহস্পতিবার পিংলা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অন্তরা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ” মাস্টারমশাইকে কটক এবং কার্তিক বাবুকে মেদিনীপুর নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুজনেরই জটিল অপারেশন করতে হবে। আর কোনও দিন পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারবেন কিনা ওঁরা সেটা চিকিৎসক আর ভগবানই জানেন।”

তৃনমূল জেলা সভাপতি অজিত মাইতি জানিয়েছেন, “আক্রমনের ঘটনা অসত্য। তৃনমূল কর্মীদের ওপর আক্রমণ করতে এসেছিল ওরাই সেটারই প্রত্যঘাত হয়েছে।” পিন্ডরুই গ্রামের বাসিন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, এই এলাকায় অভিযুক্তদের নেতৃত্বে একটি অত্যাচারী বাহিনী গড়ে উঠেছে। পিন্ডরুই বাজার সহ গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে চোলাই ও দেশি বিলাতি মদের আসর নিত্য দিনই বসে। অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। এক বাসিন্দা জানালেন, “বছর দুয়েক আগে এক সিপিএম সমর্থককেও এভাবেই তুলে নিয়ে গিয়ে বেঁধে জামা খুলে নিয়ে চাবুক পেটা করা হয়েছিল। তৃনমূল বা সরকারের বিরোধিতা করলে এই গ্রামে কেউ থাকতে পারেনা। কিছুদিন আগেই ফরোয়ার্ড ব্লকের এক নেতা দল ছেড়ে তৃনমূলে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এই হল মন্ত্রীর নিজের গ্রাম।”

RELATED ARTICLES

Most Popular