নিজস্ব সংবাদদাতা: মেদিনীপুর শহরের নিমতলা চক থেকে বটতলা হয়ে গোলকুয়াচক অন্যদিকে বটতলা চক থেকে নান্নুরচক। একদিকের দৈর্ঘ্য প্রায় ২কিলোমিটার, অন্যদিকে ১ কিলোমিটার! শহরের হৃৎপিণ্ডের রিংরোড ধরে এতবড় এলাকা জুড়ে কন্টেনমেন্ট জোন জেলায় তো দুরের কথা রাজ্যে হয়েছে কিনা সন্দেহ। সম্প্রতি কন্টেনমেন্ট জোনের যে নিয়ম নীতি মানা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে আক্রান্ত পরিবারের বাড়িটিকে ঘিরে ১৫০ মিটার ব্যাস জুড়ে কন্টেনমেন্ট করা হচ্ছে। অথচ এই দীর্ঘতম এলাকায় কী এমন হয়ে গেল যে প্রায় এত বড় কন্টেনমেন্ট জোন করতে হল?
পুলিশের একটি তরফে দাবি করা হয়েছে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এক পড়ুয়া ও দুই জুনিয়ার ডাক্তার করোনা সংক্রমিত হয়েছেন৷ মঙ্গলবার মেডিক্যালের আরও একজনের শরীরে সংক্রমন দেখা গিয়েছে ৷ এই মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল স্টুডেন্টদের হোস্টেল এই গন্ডিবদ্ধ এলাকার মধ্যেই পড়ে ৷ এই কন্টেনমেন্ট এলাকায় ৬টি করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে তাই এই তৎপরতা। যদি এই দাবি সত্যি হয় তাহলেও তা যুক্তি হিসাবে দাঁড়ায়না। কারন সেক্ষেত্রে বাড়িগুলিকেই বিছিন্ন করে দেওয়া যায় যেমনটা সব জায়গায় করা যায়। আর ওই যুক্তিতে রাস্তা আটকালে খড়গপুর শহরে কোনও রাস্তাতেই যাতায়ত করা যাবেনা কারন সংক্রমনের হিসাবে খড়গপুর মেদিনীপুর শহরের প্রায় ১০০গুন বেশি।
কেন এই দীর্ঘতম নাকাবন্দি তার কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা অবশ্য দেয়নি জেলা বা স্থানীয় প্রশাসন ফলে ঠেকে ঠেকে গুজব আর রাজনৈতিক দলগুলির তরজা জমে উঠেছে। কেউ বলছে ভিতরে ভিতরে প্রচুর আক্রান্ত হয়ে পড়েছে শহরে, কেউ আবার সংখ্যা ধরে ধরে নিজের নিজের ঘোড়ার মুখের কথা বলে আক্রান্ত ২০ থেকে ২১ অবধি চালিয়ে যাচ্ছে। গল্পের গরুকে গাছে তোলার এ এক মরিয়া সুযোগ যেন।
বিজেপির দাবি করোনা সংক্রমনের নাম করে রাস্তা আটকে বুধবারের রামমন্দির ভিতপুজো উৎসাহ উদ্দীপনাকে নিষ্প্রভ করতে চাইছে পুলিশ প্রশাসন। মঙ্গলবার বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাস এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, এই উদ্যোগ সম্পুর্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রনোদিত ৷ বুধবার রামমন্দিরের ভিতপুজো , সেই উপলক্ষ্যে বহু মানুষকে আমরা আহ্বান করেছিল পুজো, যজ্ঞ করতে ৷ মানুষ যাতে রাস্তায় না বেরিয়ে, এসব না করতে পারে তাকে আটকাতেই পুলিশের এই ধরনের উদ্যোগ ৷ মেদিনীপুর শহরের মানুষের স্বাভাবিক বিচরন বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ ৷ তা না হলে রাস্তা আটকে কন্টেমন্ট জোন তৈরির কোনো প্রয়োজন নেই ৷ আমরা এটা নিয়ে সর্ব স্তরে জানিয়েছি ৷
অন্যদিকে বিজেপির এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি ৷ তিনি বলেন, বিজেপি এই সব উদ্ভট কথাবার্তা বলে করোনা মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাফল্যকে ছোট করতে চাইছে।দল ৷ তা না হলে কন্টেনমেন্ট জোন নিয়ে এই মন্তব্য করতো না ৷ প্রশাসন মানুষের নিরাপত্তার জন্য, মহামারিকে রোধ করার কথা ভেবে এই কাজ করেছে ৷ স্বাস্থ্য বিধি মেনেই এসব করা হচ্ছে এর সঙ্গে রামমন্দিরের ভিত পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। সব মিলিয়ে জমজমাট জেলার বৃহত্তম কন্টেনমেন্ট চর্চা।