নিজস্ব সংবাদদাতা; কলকাতা: দলবদলুদের নিয়ে দলের মধ্যে ধিরে ধিরে বিক্ষোভ চাড়া দিচ্ছে দলের মধ্যে। উঁচুতলা থেকে নিচুতলায় বিক্ষোভ ক্রমশ সঞ্চারিত হচ্ছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সোমবার বুধবার দুর্গাপুরে, চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি ও হাতাহাতির মধ্যে দিয়ে। বিজেপির পুরানো কর্মীরা বুঝতে পারছেননা গতকাল যাদের চোর, তোলাবাজ বলে জনসমক্ষে বলেছেন আজ তাকেই দলে কিভাবে মেনে নেওয়া যায়? দুর্গাপুরে আওয়াজ উঠেছে ‘কয়লা মাফিয়া’ রাজুকে দলে নেওয়া যাবেনা, আলিপুরদুয়ারে দশরথ তিরকেকে দলে নেওয়ার বিরুদ্ধে উড়েছে কালো পতাকা। মনে করা হচ্ছে দলের মধ্যে এই বিদ্রোহকে সামাল দিতে দলের সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসুকেই বলির পাঁঠা করলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
তৃনমূলের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে আসানসোলের পুরপ্রশাসক তথা পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি তৃণমুল ছেড়েছিলেন।তার এই পদক্ষেপকে বিজেপিতে যোগদানে একধাপ এগিয়ে যাওয়া বলেই মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। জিতেন্দ্রর পদত্যাগের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মতান্তর মিটে যাওয়ায় তিনি তৃণমূলেই থাকছেন বলে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান জিতেন্দ্র তিওয়ারী।
অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরে জোড় জল্পনা শুরু হয়। রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেতা সায়ন্তন বসু-সহ আরও অনেকেই ছিলেন জিতেন্দ্রর বিপক্ষে।
তারা কেউই পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ককে দলে স্বাগত জানাতে রাজি ছিলেননা। সায়ন্তন বসু এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, জিতেন্দ্রকে দলে নেওয়া ঠিক হবে না। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে কথা বলবেন। তার প্রকাশ্যে এই মন্তব্য দল ভাল ভাবে নেয়নি।ফলস্বরূপ তাকে শোকজ করেছে রাজ্য নেতৃত্ব।
দলের ধারণা আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক, তৃনমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিজেপিতে আসার পথে সায়ন্তন বসুর প্রকাশ্য বিরোধিতাই দলের মধ্যে দলবদলু বিরোধিতার জন্ম দিয়েছে। জিতেন্দ্রর বিজেপিতে যোগদানের ঘোষণা মেনে নিতে পারেননি দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। আর সে কথা প্রকাশ্যেই বলেন তিনি। সায়ন্তনের পাশাপাশি একই কথা বলেছিলেন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। এরপরই কার্যত পিছু হটেন জিতেন্দ্র। মত বদলে থেকে যান তৃনমূলেই। মনে করা হচ্ছে সায়ন্তনের সেই মন্তব্যকে ভালভাবে নিতে পারেননি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। আর সেই কারণে শোকজের মুখে সায়ন্তন বসু।
মঙ্গলবার তাকে শোকজের চিঠি পাঠাল রাজ্য বিজেপি। ৭ দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে।সায়ন্তন বাবু ছাড়াও রাজ্য নেতৃত্বের কোপে পড়েছেন আরও এক নেতা। দলবিরোধী মন্তব্যের জেরে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মাকেও শোকজ করা হয়েছে বলে জানা যায়। গঙ্গাপ্রসাদকেও শোকজ করে সাতদিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। গঙ্গাপ্রসাদ শর্মাও সংবাদ মাধ্যমে ‘দলবিরোধী’ মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। অমিত শাহর সভায় আলিপুরদুয়ারে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন তৃণমুল সাংসদ দশরথ তিরকে। এই যোগদান প্রসঙ্গে গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার মন্তব্য করেছিলেন,এখন জেলায় দলে কোনও পদ খালি নেই। কাউকে পদ দেওয়া যাবে না।
তবে প্রশ্ন উঠেছে জিতেন্দ্রকে বিজেপিতে নেওয়া নিয়ে এর চেয়েও বেশি বিরোধিতা করেছিলেন বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পল,সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।একই ইস্যুতে তারা ছাড় পেয়ে গেলেন। তাহলে দিলীপ ও সায়ন্তনের মধ্যে কী বাড়ছে দুরত্ব?শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এমন সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু হয়েছে।
অভিজ্ঞ মহল অবশ্য মনে করছে শুভেন্দু সহ একগুচ্ছ সাংসদ বিধায়ক দলে আসার পরবর্তী পর্যায়ে আরও বেশ কিছু তৃনমূল নেতাকর্মী বিজেপিতে আসার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছে। ধাপে ধাপে তাঁদের দলে নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় আরও জোরালো বিদ্রোহের আশঙ্কা করছেন বিজেপি সভাপতি। সেই বিদ্রোহ আগেভাগেই দমন করার কড়া বার্তাই দেওয়া হল সায়ন্তন বসুকে বলি করে।