নিজস্ব সংবাদদাতা: সময়টা ভাল যাচ্ছেনা ঝাড়খন্ড পার্টি (নরেন)র সর্বাধিনায়িকা চুনিবালা হাঁসদার। পার্টিতে জয় নেই বহুদিন। ২০০৬-১১ বিধায়ক ছিলেন প্রয়াত নরেন হাঁসদার স্ত্রী। তারপর দাঁড়িয়েছিলেন ২০১৬ বিধানসভায়। বাম সমর্থনে ঝাড়গ্রাম আসনে কিন্তু জয় আসেনি। সেবার বিনপুর আসনে দাঁড় করিয়েছিলেন মেয়ে বীরবাহাকে কিন্তু জামানত জব্দ হয়। এরপর ফের ২০১৯, বীরবাহাকে ফের দাঁড় করালেন লোকসভায় কিন্তু সেবারও পরাজয়।
সত্যি কথা বলতে কী জঙ্গলে আর ঝাড়খন্ড পার্টি (নরেন) বলে কিছু নেই আর তাই বোধহয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নরেন হাঁসদার উত্তরাধিকার যোগ দিলেন তৃনমূলেই। ওদিকে জঙ্গলে অস্ত্বিত্ব সঙ্কটে তৃনমূল কংগ্রেস। আদিবাসী ভোট গলগল করে বেরিয়ে গেছে গেরুয়া কমুন্ডুলে। রাজনীতির কিছুই অবশিষ্ট না থাকলেও অভিনেত্রী হিসেবে বীরবাহার জনপ্রিয়তা রয়েছে আদিবাসী মহলে। তাই প্রায় ৩০টি ছায়াছবির নায়িকাকে পেয়ে কিছুটা হলেও আশার আলো। সব মিলিয়ে তৃনমূল কংগ্রেসও বীরবাহাকে আপন করে নিল। বুধবার সন্ধ্যায় বেহালার ম্যান্টনে বিধায়ক কার্যালয়ে বাবার প্রতিষ্ঠিত দলের পতাকা ছেড়ে তৃনমূলের দলীয় পতাকা তুলে নেন বীরবাহা।
তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রাম জেলার দায়িত্বে থাকা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বীরবাহার হাতে পতাকা তুলে দিতে গিয়ে বলেছেন, “‘দলনেত্রীর অনুমতি ক্রমে বীরবাহাকে দলে নেওয়া হল। তিনি আমাদের অতি পরিচিত মানুষ। বীরবাহার মা চুনীবালা হাঁসদা। সংগ্রামী পরিবার থেকে উঠে এসেছেন তিনি।’’ অন্যদিকে বীরবাহা বলেছেন, ‘‘আমি মানুষের জন্য কাজ করেছি ঠিকই। কিন্তু এমন মঞ্চ পাচ্ছিলাম না, যাতে মানুষের খুব কাছে পৌঁছনো যায়। আজ আমি পার্থবাবুর হাত ধরে সেই রাস্তা পেলাম। আমি মানুষের জন্য কাজ করে দিদির হাত শক্ত করতে চাই।’’
যদিও বীরবাহার এই তৃনমূলে যোগদানের পেছনে ফের তাঁর প্রার্থী হওয়ার স্পৃহাকেই সামনে আনছেন রাজনীতিবিদরা। ঝাড়গ্রাম ও তার আশেপাশের পরিমন্ডলে বিধানসভায় মূলতঃ কংগ্রেসের সাথেই জোট করে সাফল্য এসেছিল নরেন হাঁসদা এবং তাঁর প্রয়ানের পর চুনিবালা হাঁসদার। তার বাইরে এই পার্টির নিজস্ব সাফল্য ছিল কেবলমাত্র পঞ্চায়েত গুলিতে। যদিও এখন তাও ইতিহাস। বাম আমলেও এই পার্টির যে স্বাধীন স্বত্ত্বা ছিল তৃনমূলের আমলে তা কার্যত গিলে নিয়েছে শাসকদল। তাই তৃনমূল কংগ্রেসে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প ছিলনা নরেন ও চুনিবালা কন্যা বীরবাহার কাছে।
যদিও প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি তাঁর সদ্য নতুন দলের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা দল নেবে।’’ বীরবাহার এই কথায় ঘাড় নেড়েছেন পার্থ। অর্থাৎ তাঁর কথা ভাবা হলেও হতে পারে। প্রার্থী ঘোষণা চূড়ান্ত করতে পারেনি তৃনমূল কংগ্রেস। চলছে শেষ মুহূর্তের পারমুটেশন ও কম্বিনেশন। ঝাড়গ্রামে লাইনে রয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ উমা সরেন সহ অনেকেই। সুকুমার হাঁসদার মৃত্যুর পর ঝাড়গ্রাম আসনে দাবিদারের শেষ নেই। এখন সেই লাইনে বীরবাহা কিনা সেটা যেমন দেখার তেমনই দেখার যে তাঁকে ঘিরে তৃনমূল কংগ্রেস কোনও অক্সিজেন পায় কিনা।