নিউজ ডেস্ক: একমাসের উত্তরবঙ্গ সফরে গতকালই শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকর। শিলিগুড়িতে রাত্রি যাপনের পর শৈলশহর দার্জিলিং যাওয়ার পথে শিলিগুড়ি সরকারি অতিথিশালায় সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেয় রাজ্যপাল। পাশাপাশি রাজ্য কেন্দ্রের সরকারের জনকল্যাণ প্রকল্পের সহযোগিতা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা দেখিয়ে দিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা। রাজ্য সরকার কেন্দ্রের সাথে সামঞ্জস্য না রেখে নিজেরা সব করতে গিয়ে এই অবস্থা করেছে। যদি কেন্দ্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করত তাহলে এই হাল হত না।’
রাজ্য সরকারের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেওয়ার পরই উঁচুতলার সরকারি কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীরা কখনই রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে কাজ করতে পারেন না। কিন্তু রাজ্য সরকারের কিছু আইএএস এবং আইপিএস অফিসার সেই ভুলটাই করছেন। এতে দেশের গণতন্ত্রের উপর আঘাত করা হচ্ছে। আইনের থেকে কেউ বেশি শক্তিশালী নয়। রাজ্যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য রাজ্যপাল হিসেবে এসব কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবো না।’ সেইসাথে পাহাড়ের অশান্ত পরিবেশ নিয়ে বিমল গুরুংকেও একহাত নেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বিমল গুরুং আইনের চোখে দোষী। তাই আইন নিজের পথেই চলবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল দার্জিলিং আসার পথে মালদা রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, ‘রাজ্যের আরেকটি রাজভবন রয়েছে দার্জিলিংয়ে। সেখানে থেকে রাজ্য পরিচালনা করবেন তিনি। সেই উদ্দেশ্যেই ওনার দার্জিলিং যাত্রা। তিনি আরও বলেন, ‘দার্জিলিংয়ে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। সেখানে চা বাগানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শুনতে হবে। পর্যটকদের সমস্যার কথা শুনতে হবে। গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলা জরুরি। তাই যাওয়া।’ তিনি জানান,‘এবার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এ রাজ্যের শিল্পীরা পুজোয় তাঁদের কাজ ঠিকঠাক দেখাতে পারেন নি। মানুষরা পুজো উপভোগ করতে পারেন নি। সামনের বছর ঠিক পারবেন। তখন করোনা থাকবে না।‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ এগোচ্ছে। গোটা বিশ্ব তা দেখছে। আমাদের যা ৭০ বছরেও সম্ভব হয় নি, এবার তা হচ্ছে। কেউ কী ভাবতে পেরেছিল যে, ৩৭০ ধার উঠে যাবে! রাম মন্দিরের নির্মাণের কাজ শুরু হবে, কেউ ভাবতে পেরেছিল! তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কাজ শুরু হয়েছে।’
এরপরই তিনি সন্ধ্যায় এনজেপি স্টেশনে পৌঁছান। সেখানে সরকারি অতিথি শালায় রাত্রিবাস করে ফের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত প্রসঙ্গও উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘রাজ্য সরকার আমার সাথে ঝগড়া করছে।’ এরপর বৈঠক শেষে সস্ত্রীক শৈল শহরের উদ্দেশ্য রওনা দেন রাজ্যপাল। তবে পাহাড় রাজনীতির নতুন সমীকরণের মাঝে রাজ্যপালের এই সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।