নিজস্ব সংবাদদাতা: কাছের মানুষটির গুণের কদর করা সাধারণ বাঙালির ধম্মে সয়না। পশ্চিম বরমাল্য পরানোর পরই রবীন্দ্রনাথকে চিনেছিল বাঙালি, তার আগে শুধুই অবহেলা আর বক্রোক্তি। ১৯৭৪ সালে ভারতের চতুর্থ রাষ্ট্রপতি বরাহ গিরি ভেঙ্কট গিরির হাত থেকে স্কাউট সার্টফিকেট পাওয়া মানুষটা খড়গপুর শহরের আনাচে কানাচে অজস্র কাজ নিয়ে ঘুরে বেড়ান। ছোট বড় যে কোনও মানুষের যে কোনোও কাজকেই ভীষন বড় করে দেখার মত বড় হৃদয় নিয়ে বাহবা দেন অথচ নিজে এমন ভাবে থাকেন যেন নিজে কিছুই করতে জানেননা।
খড়গপুর শহরের বোগদা থেকে ইন্দা, নিমপুরা থেকে মালঞ্চ, খরিদা থেকে প্রেমবাজার, গিরি ময়দান থেকে তালবাগিচায় ঘুরে বেড়ান সংষ্কৃতি কিংবা পশু ক্লেশ নিবারণে, শর্ট ফিল্ম কিংবা পরিবেশ দূষণ রোধে, নাটক করতে অথবা ছবি তুলতে কিন্তু লো-প্রোফাইল জীবন ধারন আর সবজান্তা মনোভাব না থাকায় চেনা মানুষগুলোই যেন চিনতে পারেননা তাঁকে। সেই বিভূ কানুনগোকেই একটি আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত করল ‘আর্ট মাদার আর্থ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি বিশ্বজনীন সংস্থা।
ধরিত্রী রত্ন বা Gem Of The Earth award ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটের পাশাপাশি শ্রী কানুনগোকে বিশ্ব প্রেমিক বা Earth Lover Award পুরস্কার প্রদান করা হল তাঁকে। ১৫ই জানুয়ারি, শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার নাটশালে একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তাঁকে এই সম্মান তুলে দেয় আর্ট মাদার আর্থ ফাউন্ডেশন নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ভারতীয় বিভাগ।
সারা বিশ্বজুড়ে ধরিত্রী বিষয়ক কার্যক্রম নিয়ে থাকে এই সংস্থা। পরিবেশ, মানবসম্পদ, শিল্পকলা, সংস্কৃতি ইত্যাদি নানা বিষয় যা কিনা বিশ্বকে শান্তি, সমৃদ্ধি, উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে অথচ তাতে পৃথিবীর কোনোও ক্ষতি হয়না এমনই চর্চা ও চর্যার চালিয়ে যাওয়াই এই সংস্থার প্রধান কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। নিজেদের কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে যারা এই কাজ করে থাকেন তাঁদের সম্মান ও পুরস্কার প্রদান করে থাকেন এই সংস্থা। আন্তর্জাতিক স্তরে মোট ৬টি পুরস্কার প্রদান করে থাকে এই সংস্থা। যার একটি বিভূ কানুনগোকে প্রদান করা হয়েছে ধরিত্রীকে তাঁর জীবনভর ধারাবাহিক সেবা প্রদানের জন্য।
বিভূ কানুনগো দক্ষিণপূর্ব রেলের খড়গপুর বিভাগের একজন কর্মী হিসেবে বছর খানেক আগে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু এই পেশার মধ্যেও তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন ধরিত্রী সন্তানদের জন্য। ভয়াবহ বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা জ্ঞাননেশ্বরী এক্সপ্রেস নাশকতার মত দুর্ঘটনাস্থলে। স্কাউট টিম নিয়ে চালিয়েছেন উদ্ধার কার্য।
বিভূ কানুনগো এই বয়সেও সামলে যাচ্ছেন স্কাউট গাইড ফেলোশিপের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। যুক্ত রয়েছেন ফ্রেইন্ডস অফ আ্যনিমেল সংস্থার সঙ্গে। লকডাউনে তাঁর নির্মিত করোনা ও প্ল্যাস্টিক দূষণ নিয়ে দুটি শর্ট ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে। খড়গপুর শহরের এমন গর্বের মানুষকে পুরষ্কৃত করে খড়গপুরকেই সম্মানিত করেছেন সংস্থার ফাউন্ডার ডিরেক্টর তথা পুরস্কার কমিটির প্রধান মাইকেল তরুণ।