নিজস্ব সংবাদদাতা:মনে হবে যেন কোনও ফিল্ম স্টারকে রাস্তায় পেয়ে তাঁকে ঘিরে ধরেছে জনতা। কারও আবদার তাঁর কথাটা শুনতে হবে। কেউ আবার স্মার্ট ফোনে একটা ছবি তুলতে চান। নিরাপত্তারক্ষীরা হিমশিম খাচ্ছেন তাঁকে পথ করে দিতে। এমনই উন্মাদনায় ভাসালেন ভারতী ঘোষ। কর্মী সমর্থকদের সেই জ্বালাতন সস্নেহে প্রশ্রয় দিয়েই গাড়ি থেকে নেমে হাঁটলেন বিজেপি নেত্রী শুধু তাই নয় ক্রমশ সময়োপযোগী বক্তব্য রাখতে চৌখস হয়ে ওঠা ভারতী হাতিয়ার করলেন রাজ্য সরকারের আজই শুরু হওয়া নতুন কর্মসূচি টিকেই।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন প্রকল্প ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার।’ বিধাবসভা নির্বাচনের মুখে মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ঘোষিত এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য মানুষের আরও কাছে গিয়ে সরকারি পরিষেবাকে পৌঁছে দেওয়া। এরজন্য ব্লক ও পৌরসভা স্তরে শিবির করা হবে যেখানে সরকারি আধিকারিকরা উপভোক্তাকে সরাসরি পরিষেবা পাইয়ে দিতে সাহায্য করবেন। মঙ্গলবার এই প্রকল্পের শুরুর দিনই তাকে তীব্র কটাক্ষ করলেন রাজ্য বিজেপির সহ সভানেত্রী ভারতী ঘোষ।
এদিন তৃনমূলের গড় হলদিয়াতে একটি মহামিছিলে অংশ নিয়েছিলেন এই প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক। সেখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ভারতী বলেন, ‘ যে সরকারের ঘর ভেঙে যেতে বসেছে সেই সরকার এখন দুয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। যার ঘরই থাকবেনা তার আবার দুয়ার কিসের? সরকার বরং ঘর সামলাক।”
বাস্তবিকই ভারতীর এই কটাক্ষ তৃনমূলের বর্তমান টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে। বিধায়ক মিহির গোস্বামী দল ছেড়েছেন। তৃনমূলের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন, লাইনে হয়ত আরও অনেকে। এরকমই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতী ঘোষের এই কটাক্ষে উজ্জীবিত বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। হাত তালি আর উল্লাসে ফেটে পড়েছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার বিকেলে হলদিয়ার দূর্গাচক এলাকার গিরিশ মোড় থেকে সিপিটি বাজার পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের মহামিছিল কার্যত ভিড়ে ঠাসা। সেই মিছিলের সামনে হেঁটে ঘাম ঝরিয়েছেন বঙ্গ বিজেপির এই জনপ্রিয় নেত্রী। পদযাত্রা শেষে সিপিটি বাজারে পথসভা। ভারতী বলেছেন,’আগে দুয়ারে দুয়ারে নয়, নিজের দলকে ঠিক করুন। দল ভেঙে যাচ্ছে।’ তাঁর প্রশ্ন,’কেউ থাকবে না তো দুয়ারে দুয়ারে কে যাবে? একা মমতা ব্যানার্জি কী ১০ কোটি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাবেন?’ তাঁর হুঁশিয়ারি,’ এই সরকারকে আমরা একেবারে ঘাড় ধরে বের করে দেব। সরকারের মাথায় যাঁরা আছেন তাঁদের আমরা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেব।’
এদিনের কর্মসূচিতে যোগদান করতে আসা কৌশিক বারিক নামের এক বিজেপি কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে । আক্রান্ত ওই কর্মীকে হাজির করানো হয় পথসভার জায়গায়। ঘটনার তীব্র নিন্দা করে ভারতী বলেন,’ পশ্চিমবঙ্গে যেমন গণতন্ত্র নেই, তেমনি বিরোধীদের যাতে কোনও অস্তিত্ব না থাকে তার জন্য পরিকল্পনা করে আমাদের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন বিজেপি-র লোকজন। আজই খেজুরিতে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে।”
হলদিয়ার এই কর্মসূচিতে ভারতী ঘোষকে ঘিরে সমর্থকদের তেমনই উন্মাদনা যেমনটা গত কয়েকদিন ধরে নজরে পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, মেচোগ্রাম, চণ্ডীপুর, মাধাখালিতে। জেলার ১৬টি বিধানসভার ১৩টিতেই তৃনমূলের নিরঙ্কুশ আধিপত্য ছিল কিন্তু এবার সেখানেই হানা দিচ্ছেন ভারতী ঘোষ। তাঁর সভায় জনস্রোত আর তাঁর সাম্প্রতিক শান দেওয়া স্বল্প অথচ ধারালো বাক্যাবান যেন সিঁদ কেটেই চলেছে শাসকের ঘরে। সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে শুভেন্দু ফ্যাক্টর। সব মিলিয়ে যেন লড়াই ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে তাম্রলিপ্তের জেলায়।