শশাঙ্ক প্রধান : বিজেপির সভাকে ঘিরে আগুন জ্বলল পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে, পুড়ল তৃণমূলের পার্টি অফিস, বাইক। বিজেপি আর তৃনমূল কংগ্রেস সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত উভয় পক্ষের একাধিক ব্যক্তি। উত্তেজনার সবংয়ে মোতায়েন হয়েছে বিরাট পুলিশ বাহিনী। আর এসবের মাঝখানেই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভূঁইয়ার নাম না ধরেই তাঁকে রাবন আখ্যা দিয়ে এলেন বিজেপির নেত্রী ভারতী ঘোষ। শুধু তাই নয় মানস ভূঁইয়াই সবংকে ‘অত্যাচারের লঙ্কা’ বানিয়ে রেখেছেন এমনটাও অভিযোগ করে গেলেন জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার।
শুক্রবার সবংয়ের বুড়ালে সদ্য সংসদে পাশ হওয়া কৃষি আইনের সমর্থনে সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সহ সভানেত্রী ও প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। সভায় প্রথমে এসেছিলেন ভারতী ঘোষ তার কিছু পরেই আসেন দিলীপ ঘোষ। ভারতী ঘোষের সভা চলাকালীনই গন্ডগোলের খবর আসে। সভায় খবর আসে মোহাড়ে কাঁটাখালির দিক থেকে আসা বিজেপি সমর্থকদের পথ আটকানো হচ্ছে, মারধর এমন কি তৃণমূলের পার্টি অফিসে বিজেপি সমর্থকদের আটকে রাখার ঘটনাও ঘটছে।
ভারতী ঘোষের সভা তখন শুরুর মুখে । পরেই ভারতী ঘোষকে বলতে শোনা যায়, “রাবনের সৈন্যরা আমাদের কর্মীদের ওপর অত্যাচার করছে, ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এরাই কদিন আগে মোহাড়ে আমাদের কর্মী দীপক মন্ডলকে বোমা মেরে খুন করেছিল। এই সবংকে লঙ্কা বানিয়ে রেখেছে এখানকার রাবন। সেই রাবনই তার সৈন্যদের নামিয়ে দিয়েছে আমাদের কর্মীদের ওপর আক্রমণ করার জন্য।” ঘোষ আরও কটাক্ষ করে বলেন, ‘রাবন যেমন লঙ্কার বাইরে বের হতনা ভয়ে। তেমনই এই রাবনও সবংয়ের বাইরে বের হয়না। শুধুই এখানে বসে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাবনের দিন শেষ হয়ে আসছে কারন রামের সেনারা লঙ্কায় (পড়ুন সবংয়ে )নেমে পড়েছে। ২০২১য়ে এর জবাব পাবেন।”
জানা যায় এই বক্তব্যের মধ্যেই সভায় খবর আসে যে বিজেপি কর্মীদের আটকানো হচ্ছে। খবর পেয়ে সভাস্থল থেকেই কিছু বিজেপি কর্মী ছুটে যান। যেহেতু সংখ্যায় এরা বেশি ছিল তাই মোহাড়ের তৃনমূলের কর্মীরা এদের কাছে টিকতে পারেনি। সংঘর্ষের মুখে পিছু হটে তারা। সূত্রের খবর, বিজেপি কর্মীদের হাতে বেধড়ক মার খায় তৃনমূল কর্মীরা। নিজেদের পার্টি অফিস ছেড়ে পালায় তারা। পার্টি অফিসে আটকে রাখা এক বিজেপি কর্মীকে পার্টি অফিস থেকে বের করে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
যদিও বিজেপি এই দাবি অস্বীকার করেছে। বিজেপির সবং নেতা শান্তনু সাহু বলেছেন, ‘ “সভাস্থলে আসার পথে আমাদের কর্মীদের আটকে রেখে ব্যাপক মারধর করে। খবর পেয়ে আমাদের কিছু কর্মী গিয়ে ওদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। পরে কী হয়েছে আমাদের জানা নেই।”
মানস ভূঁইয়া বলেন, “আমাদের কর্মীদের ব্যাপক মারধর করা হয়। প্রচুর কর্মীকে মারধর করেছে বিজেপির দুষ্কৃতিরা। যার মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠাতে হয়েছে। একজন সবং হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।” ভূঁইয়া আরও বলেন, “অন্য কর্মীদের মারধর করাটা তৃণমূলের সংষ্কৃতি নয়। পার্শ্ববর্তী জেলার বাকচা এলাকা থেকে সমাজ বিরোধীদের এনে বিজেপির লোকেরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।” পাল্টা ভারতী ঘোষ বলেন, ‘আমরা মারব কী করে? আমাদের কর্মীরা অসহায় , পুলিশ ওঁদের সঙ্গে। যৌথ সন্ত্রাস চলছে। পুলিশ এখন লাইসেন্স প্রাপ্ত গুন্ডা। ‘
এদিকে ঘটনার পর থেকেই চরম উত্তেজনা রয়েছে মোহাড় এলাকায়। কয়েকদিন আগেই মোহাড়ে খুন হয়েছিলেন ময়না থানার বাকচা এলাকার বিজেপি কর্মী দীপক মন্ডল। তারপর শুক্রবারের ঘটনার মধ্যে বিজেপি কর্মীদের সেই ক্রোধেরও প্রতিফলন ঘটে থাকতে পারে। এদিকে ফুঁসছেন মোহাড় এলাকার তৃনমূল কর্মীরাও। ফলে পাছে ফের অশান্তি ছড়ায় তাই পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে।
এই পুলিশের টহলকেও কটাক্ষ করেছে বিজেপি। শান্তনু সাহু বলেছেন, “গতকাল সারা রাত ধরে সবংয়ের গ্রামে গ্রামে বোমাবাজি করেছে তৃনমূল যাতে ভয়ে বিজেপির সভায় লোক না আসে। বুড়ালে সভা স্থলের পাশের গ্রাম গুলিতেও বোমাবাজি চলে। সারা রাত আমাদের দেড়শ সমর্থক সভাস্থল ঘিরে রেখেছিল যাতে না ওরা মঞ্চ ভেঙে দিতে না পারে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম সেই কথা কিন্তু গতকাল পুলিশের দেখা মেলেনি। অথচ আজ পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ সবং।” সব মিলিয়ে সরগরম হয়ে রয়েছে সবং।