নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পশ্চিমবঙ্গ কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য এবং আইআইটি খড়গপুর প্রাক্তন অধ্যাপক প্রয়াত সব্যসাচী সেনগুপ্তর স্মৃতিতে একটি স্মরণসভার আয়োজন করল আমরা বামপন্থী, খড়গপুর। খড়গপুর শহরের তালবাগিচায় প্রয়াত অধ্যাপককের স্মৃতি চারনায় উঠে আসল তাঁর নানা বর্ণময় ও কর্মকুশল জীবন। গত ২৬ মে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন অধ্যাপক সেনগুপ্ত। মাত্র ৭০বছর বয়স হয়েছিল তাঁর।
অধ্যাপক সেনগুপ্তর কর্মজীবনের বেশিরভাগটাই কেটেছে আইআইটি খড়গপুর ক্যাম্পাসে আর সেই সূত্র ধরেই আইআইটি ও তার আশেপাশের এলাকায় নিজস্ব একটি পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সেই পরিচিতি ছিল সমাজসেবা ও বামপন্থী ভাবাদর্শের। এরফলে খড়গপুর ও হিজলী সংলগ্ন এলাকায় তিনি রেখে গেছেন অগণিত অনুগ্রাহী ও প্রিয়জনেদের।মূলতঃ তাঁরাই ছিলেন এই স্মরণসভার আয়োজক। যে স্মরণসভায় হাজির ছিলেন আইআইটি খড়গপুরের খ্যাতনামা তিনজন শিক্ষক, অধ্যাপক সিদ্ধার্থ সেন, অধ্যাপক শান্তনু ভৌমিক এবং অধ্যাপক বিশ্বজিৎ মাইতি। কলকাতা থেকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন আইআইটির দুই প্রাক্তন অধ্যাপক অজয় রায় এবং সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত। অধ্যাপক অজয় রায় শিবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্যও বটে।
আলোচকদের আলোচনায় উঠে এসেছে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। যেমন বামফ্রন্ট পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধ্যাপক সেনগুপ্তকে রাজ্যের কারিগরী ও প্রযুক্তি কলেজগুলি পরিচালনার জন্য প্রথম প্রযুক্তি ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুললে তার প্রথম উপাচার্যের দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয়েছিল প্রয়াত অধ্যাপকের হাতেই। এর আগে শিবপুর কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সরকারের বদল হওয়ার পর কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু বেনিয়ম কাজ করানোর চেষ্টা করা হয় তাঁকে দিয়ে যা তিনি করতে রাজি হননি। আলোচকরা জানিয়েছেন এরপর প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে তাঁকেই বেনিয়ম করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এই ঘটনার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন ভারতের বেশ কয়েকজন শিক্ষা ব্যক্তিত্ব যারমধ্যে ছিলেন আইআইটি খড়গপুরের দুই প্রাক্তন ডিরেক্টর অধ্যাপক কস্তুরীলাল চোপড়া এবং অধ্যাপক অমিতাভ ঘোষ। তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর কাছে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চিঠি পাঠান ওই শিক্ষাব্রতীরা। পিছু হটে সরকার। সম্মানে নিজের কর্মজীবন শেষ করেন অধ্যাপক সেনগুপ্ত।
তাঁর অনুগ্রাহীকুলের কাছে তাঁর পরিচয় ছিল ছোড়দা হিসাবে কারন অধ্যাপক সব্যসাচী সেনগুপ্ত এবং তাঁর জমজ কয়েক মিনিটের বড় সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত দুজনেই আইআইটি খড়গপুরের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি কয়েক মিনিটের ছোট বলে তাঁর পরিচয় হয়েছিল ছোড়দা নামেই। স্মরণসভায় উঠে এসেছে তাঁর ছাত্রপ্রীতি ও ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর একাত্ম হয়ে যাওয়ার গুণাবলীর কথা। আইআইটির অধ্যাপকরা আলোচনা করেছেন কীভাবে স্থানীয় উপাদান ও সুযোগকে ব্যবহার করে একটি আধুনিক ইলেকট্রনিক ল্যাব গড়ে তুলেছিলেন সম্পূর্ণ নিজের একক প্রচেষ্টায়। একটা সময় যখন বিপুল অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় কেন্দ্রের বরাদ্দ কমেছে সেই সময় যাতে ল্যাবের অভাবে পড়ুয়ারা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত না হয় তাই এটাই ছিল তাঁর উদ্যোগ। খড়গপুর শহরের দুই বামপন্থী ব্যক্তিত্ব মনোজ ধর ও অনিল দাস আলোচনা করেছেন প্রয়াত অধ্যাপকের সমাজবীক্ষা নিয়ে। কিভাবে তিনি মিশে যেতেন সাধারণ মানুষের সাথে।
অন্যদিকে এদিনই তালবাগিচায় ভগৎ সিং জন্মশতবার্ষিকী কমিটির উদ্যোগে দশম বর্ষ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। এই শিবিরের মোট ৫১জন রক্তদান করেছেন বলে জানা গেছে। কমিটির অন্যতম সদস্য প্রদীপ ধর জানিয়েছেন এই রক্তদানের সবচেয়ে বড় দিক হল মোট রক্তদাতার ৫০শতাংশই জীবনের প্রথম রক্ত দিয়েছেন। আমাদের দশম রক্তদান শিবির থেকে আগামীদিনের জন্য প্রায় ২৫জন নতুন রক্তদাতা পেল এই শহর। এদিন রক্তদান শিবিরের উদ্বোধন করেন খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডাঃ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়।