নিউজ ডেস্ক: বজ্রাঘাতে রাজ্যে একদিনে ২৭ জনের মৃত্যু। কেন এই দুর্যোগ, কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে মৌসম ভবন যা তথ্য দিয়েছে তাতে করে রীতিমত চোখ কপালে ওঠার মতো। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, সোমবার বাংলার আকাশে তৈরি হয়েছিল ১৬ কিলোমিটার উঁচু বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ, যার জেরেই এই ঘন ঘন বজ্রপাত। ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অবজার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিলের পর্যবেক্ষণ থেকে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য, যা জানান দিচ্ছে, এদিন রাজ্যে ৩৮ হাজার ৫৬৮টি বাজ পড়েছে।
মেঘ থেকে মাটিতে নেমে আসা বজ্রপাতটুকুই রয়েছে এই পরিসংখ্যানে। এ ছাড়াও রয়েছে মেঘের মধ্যে বজ্রপাত। অর্থাত্, আরও ২২ হাজার ৭৯৬টি। সবমিলিয়ে, ৬১ হাজার ৩৬৪টি বাজ। সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত্ উত্পন্ন হয়েছে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৪৯৪ অ্যাম্পিয়ারের। সাধারণ বাড়িতে ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেনের জন্য ১৬ অ্যাম্পিয়ারের সুইচ থাকে। এতেই স্পষ্ট, বজ্রপাতে সৃষ্ট বিদ্যুতের পরিমাণ কতটা বেশি হতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠতেই পারে, বাজের সংখ্যা মাপা হচ্ছে কীভাবে? ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অবজার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিলের আহ্বায়ক কর্নেল সঞ্জয় শ্রীবাস্তব বলেন, ‘মৌসম ভবন, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজি এবং ইসরো নেটওয়ার্ককে কাজে লাগানো হয়। ডপলার রেডার, ইনস্যাট থ্রি-ডি উপগ্রহের পাশাপাশি জাপানে হিমাবাড়ি উপগ্রহ থেকেও তথ্য পাই আমরা।’ মঙ্গলবার দিনভর তথ্য বিশ্লেষণে ব্যস্ত ছিলেন কর্নেল শ্রীবাস্তব ও তাঁর দল। তিনি জানান, ‘সাধারণত, ক্লাউড টু গ্রাউন্ডের চেয়ে ইন্টার ক্লাউড বজ্রপাত বা লাইটনিং বেশি হয়। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উল্টো। ৬৩% বজ্রপাতই হয়েছে মেঘ থেকে মাটিতে। এরকম তথ্য পেয়ে বেশ কয়েকবার বিশ্লেষণও করি আমরা। দেখা যায়, কোনও ভুলচুক নেই।’
মৌসম ভবনের পর্যবেক্ষণ, সোমবার পশ্চিমাঞ্চল থেকে উপকূলের দিকে এগোনোর সময় মেঘপুঞ্জ ‘ধনুক’-এর আকার নেয়। ‘ধনুক’ মেঘের জন্যই মুর্শিদাবাদ থেকে উপকূল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হয়। মৃত্যুও হয়েছে ৬টি জেলা জুড়ে। এর সঙ্গে আরও বিপদ ডেকেছে উল্লম্ব বজ্রগর্ভ মেঘের উচ্চতা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার আকাশে কোনও কোনও জায়গায় ১৬ কিলোমিটার পর্যন্তও মেঘের উচ্চতা ছিল। এই ধরনের মেঘে বজ্রপাত অনেক বেশি হয়।’ শুধু বজ্রবিদ্যুত্-সহ বৃষ্টি নয়, ৫৯ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিবেগে কালবৈশাখীও হয় আলিপুরে। ঝড় হয় রাজ্যের অনেক জায়গাতেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ লাগোয়া জেলাগুলিতে।
উল্লেখ্য, ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট অবজার্ভিং সিস্টেমস প্রোমোশন কাউন্সিল জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে বাংলায় বাজ পড়েছিল ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৭২৮টি। ২০২০ সালে ৯৯.৭৬% বৃদ্ধি। এক বছরে বাজ পড়ে ১৫ লক্ষ ২১ হাজার ৭৮৬টি। এর মধ্যে রয়েছে মেঘ থেকে মাটিতে পড়া বাজ, রয়েছে মেঘের অন্দরে চালাচালি হওয়া বজ্রপাতও।
প্রসঙ্গত, সোমবারে বাজ পড়ে রাজ্যে ছয় জেলায় মোট ২৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এদিন বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে হুগলি জেলায়, সেখানে মৃতের সংখ্যা ১১ জন। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদে ৯ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ২ জন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২ জন, বাঁকুড়ায় ২ জন এবং নদিয়ার নবদ্বীপে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবারের পর মঙ্গলবারেও বাজ পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয় বাঁকুড়ায়।