নিজস্ব সংবাদদাতা: ফের পোস্টার পড়ল মাওবাদীদের আর এবার একেবারে বেলপাহাড়ী মফস্বল শহরের গা ঘেঁষে। বেলপাহাড়ী থেকে মাত্র ২কিলোমিটার দুরে হদরা মোড়ের সাদা কাগজে লাল কালিতে লেখা এবারের পোস্টার গুচ্ছতে হুমকি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ২টি রাস্তার নির্মানের দায়িত্বে থাকা এক ঠিকাদারকে। সৌরভ রায় নামের ওই ঠিকাদারের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে ‘সৌরভ রায় রোডের কাজ বন্ধ করুন।’
শুক্রবার এই একই পোস্টার নাকি দেখা গিয়েছে আরও একটি জায়গাতে। বিষয় নিয়ে কিছু জানাতে চায়নি ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। উল্লেখ্য ২০১১ সালে মাওবাদী নেতা কিষানজী নিহত হওয়ার পর থেকে এই প্রথম ৯ বছরের মাথায় মাওবাদীদের প্রকাশ্য অস্তিত্ব জানা গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। গত জুলাই মাসের শেষের দিক থেকে এই ঘটনা নজরে পড়ছে।
গত ২৭শে জুলাই তিন ব্যবসায়ীকে লেভি চেয়ে হুমকি দিয়ে চিঠি মাওবাদীরা তাদের প্রথম অস্তিত্ব জানান দেয়। বেলপাহাড়ী থানার পাচাপানিতে ওই তিন ব্যবসায়ীকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাও সরাসরি স্বীকার করেনি পুলিশ। এলাকায় রটে গেছিল ২৯ জুলাই শেষ সময় সীমা দিয়েছিল মাওবাদীরা। ২৯শে জুলাই বা তার পরে তেমন কোনও ঘটনা না ঘটায় বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। এরপর ১৬ই আগষ্ট বেলপাহাড়ী থেকে ১০কিলোমিটার দুরে ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া রাজ্য সড়কের ওপর মাওবাদীদের পুরানো ডেরা ভুলাভেদা বাসস্ট্যান্ড প্রতীক্ষালয় ও সংলগ্ন এলাকায় মুড়িমুড়কির মত ছেয়ে থাকতে দেখা যায় মাওবাদী পোস্টার যেখানে স্বাধীনতা দিবস, ১৫ই আগষ্ট কালাদিবস পালনের আহ্বান জানানো হয়, যা মাওবাদীদের বরাবরের দাবি। এই বিষয়টিকেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছিল পুলিশ।
পরের ঘটনা আরও মারাত্মক ২৯আগষ্ট ঠিক মাওবাদীদের দেওয়া সেই চিঠির সময়সীমার ১মাসের মাথাতেই সেই তিন ব্যবসায়ীর এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে রাতে হানা দেয় কিছু অজ্ঞাত পরিচয় দুস্কৃতি। ব্যবসায়ীর নাম ধরে ডাকা হয়। অত রাতে সরাসরি দরজা না খুলে ব্যবসায়ী ও তাঁর স্ত্রী বাড়ির ছাদে উঠে বিষয়টি দেখতে গেলে গুলি চালায় ওই লোকেরা। গুলি থেকে বাঁচতে ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পা ভাঙে ব্যবসায়ীর স্ত্রীর। ব্যবসায়ীর দাবি এরা মাওবাদীই। পুলিশের তরফে সেই ঘটনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছিল।
শুক্রবার মাওবাদীদের এই পোস্টার সম্পর্কে তাঁর কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছেন সৌরভ। লালগড়ের আদি বাসিন্দা ও বর্তমানে মেদিনীপুর শহরে বসবাসকারী সৌরভ জানিয়েছেন তিনি আজও বেলপাহাড়ী ছিলেন কাজের সুবাদেই কিন্তু পোস্টার দেখেননি। সৌরভ বেলপাহাড়ী এলাকার দুটি রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব প্রাপ্ত যার একটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে অন্য একটি রাস্তা বেলপাহাড়ী থেকে পোড়াডিহি ৪০কিলোমিটার রাস্তার ২৮ কিমি কাজ করছেন তিনি যেটার কাজ চলছে।
ঘটনা হল বেলপাহাড়ী এলাকায় বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণকারী ঠিকাদারদের ওপর মাওবাদীদের এই চোটপাট পুরানো বিষয়। শুধু হুমকিই নয় এক সময় সার দিয়ে রাস্তা নির্মাণের যন্ত্রাংশ, গাড়ি, ডাম্পার জ্বালিয়ে দিতেও দেখা গিয়েছে মাওবাদীদের। সুতরাং সেই পুরনো ধরনেই তোলা আদায়ের কাজ মাওবাদীরা সুযোগ পেলেই করবে এটা নতুন কিছু নয়। নতুন যে বিষয়টি তা হল জঙ্গলমহল জুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি স্বত্ত্বেও মাওবাদীরা বেলপাহাড়ীর কাছাকাছি পা রাখতে সাহস দেখাচ্ছে।
এক সময় অখন্ড পশ্চিম মেদিনীপুরে মাওবাদী সমস্যার সঙ্গে লড়াই করেছেন এমন একজন দক্ষ পুলিশ অধিকারিক জানালেন, “মাওবাদীদের দীর্ঘদিনের গতিবিধি লক্ষ্য করার পর কৌশলগত অবস্থানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্পগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল। যাতে তাদের গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রন করা যায়। কিন্তু মনে হচ্ছে গত ৯ বছরে নতুন রুট তৈরি করেছে ওরা। ক্যাম্পগুলিকে এড়িয়ে নিরাপদ সেই রাস্তা ধরেই ওরা ভুলাভেদা বা বেলপাহাড়ীর মত জনবহুল জায়গা গুলিতে আসছে ওরা। লক্ষনটা ভাল নয়।”