নিজস্ব সংবাদদাতা: গলায় দড়ি দেওয়ার আগে টানা ৫০মিনিট কথা হয়েছে প্রেমিকার হবু বরের সাথে, ওইদিন সকাল থেকে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে প্রেমিকার সাথেও কিন্তু তারপরেও প্রেম টিকিয়ে রাখতে অক্ষম হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকেই বেছে নিলেন ২৩বছরের এক যুবক। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ এমনই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর বেলদা থানার অন্তর্গত জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির সোহাগপুর গ্রামে।
জানা গেছে মৃত ২৩বছরের যুবকের নাম সঞ্জীব ঘটম।বর্ধিষ্ণু কৃষক পরিবার সঞ্জীবের বাড়ির লোকেরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাশের গ্রাম শ্যামসুন্দরপুরের এক প্রাক অষ্টাদশী যুবতীর সাথে দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রেম ছিল সঞ্জীবের। সঞ্জীবের মৃতদেহ উদ্ধার করার পর বাড়ির লোকেরা তাঁর মোবাইল কল লিস্ট থেকে এমনটাই জানতে পেরেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন। যদিও মঙ্গলবার ওই দুর্ঘটনা ও বুধবার ময়নাতদন্ত এবং সৎকারের জন্য এখনও অবধি থানায় কোনও অভিযোগ করা হয়নি। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন সৎকার কার্য শেষ হওয়ার পরই তাঁরা অভিযোগ করবেন।
মৃত সঞ্জীব বাবা-মার একমাত্র ছেলে। তাঁর দিদি রয়েছে যাঁর নাম শ্রাবস্তী। শ্রাবস্তীর স্বামী বিশ্বনাথ বেরা বলেন, “আমার শালার সঙ্গে পাশের গ্রাম শ্যামসুন্দরপুরের ওই মেয়ের সঙ্গে প্রেম দুই গ্রামের সবাই জানে। নিয়মিত কথাবার্তা, দেখাশুনা এমনকি বেড়াতেও যেত তারা। আমাদের পরিবারের কোনও আপত্তি ছিলনা। ওই পরিবারের থেকে আর্থিক স্বচ্ছলতাও বেশি আমার শ্বশুরবাড়ির। কিন্তু তবুও মেয়ের বাড়ির আপত্তি ছিল। কারন বলতে পারবনা তবে মনে হয় জাতের কোনও বিষয় থাকতে পারে। জাতের বিচারে আমরা ওবিসি। ওরা হয়ত একটু উঁচু।”
বিশ্বনাথের বক্তব্য, ” তবুও ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রেম চলছিল। বিয়েও আমরা দিয়ে দিতাম কিন্তু ১৮বছর বয়স পূরণ হতে মেয়ের কয়েকমাস বাকি ছিল। এরই মধ্যে মোহনপুর থানা এলাকার এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের সাথে মেয়ের পরিবার বিয়ে ঠিক করে। সম্ভবত মেয়েকেও ওই বিয়ের ব্যাপারে রাজি করিয়ে নেয়। এরপরই ক্রমশ অবসাদে চলে যাচ্ছিল। আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল মেয়েকে ফেরানোর কিন্তু সম্ভবত সরকারি চাকুরির মোহ ছেড়ে বেরুতে পারেনি মেয়েটি।”
সঞ্জীবের জেঠতুতো ভাই উত্তম জানিয়েছেন, “মঙ্গলবার দেড়টা নাগাদ আমার কাকিমা সঞ্জীবের জন্য ভাত বেড়ে তাকে খাবার জন্য ডাকতে গিয়ে দেখে নিজের রুমে সিলিং থেকে গলায় লাইলন দড়ি দিয়ে ঝুলছে সে। সঙ্গে সঙ্গে কাকিমার চিৎকার শুনে আমরা ছুটে যাই। ওকে নামিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেই আমরা কিন্তু রাস্তায় বুঝতে পারি মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এরপরই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। আমাদের সন্দেহ হয় যে প্রেমের কারণেই এই ঘটনা। তাই আমরা ওর মোবাইল ফোন খুলে দেখি। সেখানে দেখি ঘটনার মাত্র ১৫ মিনিট আগেই এক ব্যক্তির সঙ্গে টানা ৫০মিনিট কথা বলেছিল ও। পরে জানতে পারি ওই ব্যক্তিই মোহনপুরের সেই শিক্ষক যাঁর সাথে ওর প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাশাপাশি মেয়েটির সাথে অন্ততঃ ১০বার কথা হয়েছে বলে দেখতে পাই। আমাদের মনে হয়েছে ওই দুজনকেই নিজের ভালবাসা, প্রেমের গভীরতা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে সঞ্জীব।”
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে সোহাগপুরে এক যুবকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলেও এরকম কোনও অভিযোগ তাঁরা পাননি। পুলিশ নিজেই একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। বাকি বিষয়টি পরিবারের অভিযোগ ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে দেখা যাবে।