নিজস্ব সংবাদদাতা: আর মুর্শিদাবাদ বা উত্তরবঙ্গ নয়, দক্ষিনবঙ্গেও ধিরে ধিরে জাল বিছিয়ে বসছে জাল নোট। পুলিশের কাছে খবর ছিল কিন্তু জালে সহজে ধরা পড়ছিলনা রাঘব বোয়ালের দল। অবশেষে সাফল্য এল সোমবার। পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা পুলিশ ও তার অন্তর্গত জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা ফাঁদ পেতে বামাল গ্রেপ্তার করল দুই জাল নোটের কারবারিদের। আটক করা হয়েছে কারবারিদের একটি বাইক।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে এই গ্রেপ্তার হওয়া দুই যুবক মূল কারবারিদের কাছ থেকে জাল নোট কিনে ফের সেটা আরও একটু নিচের স্তরে বিক্রি করত সেই কারবারিরা সরাসরি বাজারে জাল নোট চালাত। কিভাবে এই জাল নোট নিচের তলায় চালানো হত তার ব্যখ্যা করতে গিয়ে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, হঠাৎ একটা বাইক এসে থামে দোকানের সামনে তারপর ৭০ কিংবা ৮০ নব্বই টাকার জিনিস কিনে বাড়িয়ে দেয় ৫০০টাকার নোট। খুব তাড়া বাইক আরোহীর, মোবাইল কানে কথা বলতে ব্যস্ত, বাকি টাকা ফেরৎ নিয়ে ঝাঁ করে বাইক ছুটিয়ে ফের হওয়া। একটু বয়স্ক, মহিলা, খুব চৌখস নয় এমন দোকানিই টার্গেট। দোকানি যখন বুঝল তখন ত্রিসীমানায় খোঁজ মেলেনা জাল নোটের কারবারিদের।
বেলদা, দাঁতন, মোহনপুর এলাকার ভেতরের বাজার গুলোতে এরকমই দু’চারটে কেস ঘটেছে জানতে পেরেছিল পুলিশ। জানতে পেরেছিল কানাঘুষো, কারন বোকা বনে যাওয়া দোকানি লজ্জায় কারও কাছে বলেনা, পুলিশে অভিযোগ করা তো দূরের কথা।
তবুও পুলিশের কাছে খবর চলে আসে। ছোট দোকানিরা পাইকার বা বড় বাজারগুলিতে জিনিস কিনতে এসে বুঝতে পারে। অভিজ্ঞ পাইকার কিংবা বড় ব্যবসায়ীরা সহজেই চিনে নেয় জাল নোট। পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা জেলার অন্যতম বড় বাজার সেই বাজারের ব্যবসায়ীদের হাত থেকেই পুলিশের কাছে চলে আসে বেশ কয়েকটি জাল নোটের নমুনা। আর তারপরেই বোঝা যায় ভালই জাল বিছিয়ে বসেছে জাল নোটের কারবারিরা।
এরপরই ফাঁদ পাতা হয়। কী সেই ফাঁদ? জানা গেছে প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয় এমন একজন ব্যক্তিকে যে সরাসরি দোকানে বা সাধারন মানুষের কাছে ৭০/৮০ টাকার জিনিস কিনে বাকি টাকা ফেরৎ নিয়ে জাল ৫০০টাকা দিয়ে নগদে এবং দ্রব্য মিলিয়ে ৫০০টাকা মূল্য নিয়ে পালান। দেখা যায় এই জাল ৫০০টাকা ওই ব্যক্তি মধ্যবর্তী জাল নোটের কারবারিদের কাছ থেকে ২০০টাকায় কিনেছে। অর্থাৎ ব্যক্তির লাভ ৩০০টাকা। এই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাকে দিয়ে অথবা ওই জাল নোট সরবরাহকারীদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারে এমন কাউকে দিয়ে আরও টাকা কিনতে চান এমন টোপ দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়।
ঠিক যেমনটা সোমবার করেছিল বেলদা ও জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ি। ৪০% হারে টাকা কিনতে চেয়ে জাল নোটের কারবারিদের রফা হয়। কারবারিরা নিজের ডেরা কাউকে দেখাতে চায়না আর লেনদেন হয় তাদেরই ঠিক করে দেওয়া জায়গায়। সোমবারের লেনদেনের জায়গা ঠিক হয় জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির সাবড়া এলাকার একটি নির্ধারিত জায়গায়।
সেই মত ফাঁদ পাতা হয়। নির্ধারিত জায়গাকে ঘিরে পথচারি, ব্যবসায়ী, সাধারন মানুষের মতই ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ কিন্তু তবুও গন্ধ পেয়ে গেছিল জালিয়াতরা আর সেই মত প্রায় শেষ মুহূর্তে জায়গা বদল করে তারা এবং যে ওই টাকা কিনবে তাকে চলে আসতে বলা হয় ৫০০মিটার দুরে অন্য একটি জায়গায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রীতিমত লোমহর্ষক ও স্নায়ুর চাপের লড়াই ছিল এটা। নির্ধারিত জায়গায় প্রায় পৌঁছে গিয়ে হঠাৎই জায়গা বদলে দেয় জালিয়াতরা। বাইক ঘুরিয়ে সেখানেই চলে যায়। ঘটনা চক্রে অনেকটাই ব্যাস জুড়ে ছড়িয়ে রাখা ছিল পুলিশ কর্মীকে। দ্রুত সেই জায়গা কভার করে অন্য পুলিশ কর্মীরা, জালিয়াতদের পেছনে ধাওয়া করে আগের জায়গায় থাকা পুলিশের মূল দলটি। পুলিশের ঘেরাওর মধ্যে পড়ে যায় ওই দুই যুবক। রীতিমত বন্দুকের মুখে গ্রেপ্তার করা হয় দুজনকে।
ধৃতদের নাম এখুনি বলতে নারাজ পুলিশ কারন এদের ওপরে আরও স্তর রয়েছে যাদের কাছ থেকে হয়ত কুড়ি থেকে তিরিশ শতাংশ হারে এরা জাল টাকা কিনত। যতটা সম্ভব উঁচু মাথার কাছে পৌঁছাতে চায় পুলিশ। ৫০০টাকা মূল্যের ২০০টি নোট উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের আগামীকালই আদালতে পেশ করা হবে। ধৃতরা মোহনপুর এলাকার বাসিন্দা এমনটাই জানা গেছে।