নিজস্ব সংবাদদাতা: তিন মাস আগে স্বামীকে হারিয়েছিলেন বৃদ্ধা। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সন্তানের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন ৮৫ বছরের ওই বৃদ্ধা। ছেলের লাশ পুড়িয়ে এখন মায়ের লাশের অপেক্ষায় পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার অন্তর্গত জোড়াগেড়িয়া ফাঁড়ির সাউরি গ্রামের শ্মশানবন্ধুরা। পরিবারের দুই নাবালক নাবালিকা সন্তান সন্ততি নিয়ে অসহায় মায়ের এখন শুধুই সম্বল বিলাপ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে বুধবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৪৪বছর বয়সী রাজকুমার রায়ের। রাজকুমার অর্শরোগে ভুগছিলেন। মাস খানেক আগে তাঁর একটি অপারেশন হয় মেদিনীপুর শহরের একটি নার্সিংহোমে। কিন্তু সফল হয়নি সেই অস্ত্রোপচার। তীব্র যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে ফের অস্ত্রোপচার হয়। এবার ওড়িশার কটকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য এবারেও উপশম হয়নি যন্ত্রণার।
মঙ্গলবার ফের তীব্র যন্ত্রনা শুরু হলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এগরা সুপার স্পেশালিটিতে। বুধবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। সাউরি গ্রামে সেই খবর আসার পর প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনেরা লাশ আনতে রওনা দেন এগরা। স্বামীর মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতর রাজকুমারের স্ত্রী এবং তাঁর দুই নাবালক সন্তান বুঝতেই পারেনি কখন তাঁদেরই অজান্তে বাড়ির বাইরে চলে গিয়েছেন রাজকুমারের বৃদ্ধা মা আভা রায়।
প্রতিবেশীরা যখন এগরা থেকে রাজকুমারের লাশ নিয়ে বাড়ি আসার প্রস্তুতি নিয়েছেন তখনই তাঁদের কাছে খবর পৌঁছায় তাঁর মা আভা বাড়ির অদূরেই একটি তেঁতুলগাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
রাজকুমারের ভাগ্না বিশ্বজিৎ আচার্য জানান, ” আমরা ভাবতেই পারিনি এরকমটা ঘটতে পারে। তিনমাস আগে আশ্বিনের অমাবস্যা, মহালয়ার দিন আমার দাদু ধীরেন্দ্র রায়ের মৃত্যু হয়। দিদিমা ধিরে ধিরে সেই মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠেছিলেন কিন্তু তারমধ্যেই এই পুত্রশোক তাঁকে এমন বিভ্রান্ত করবে ভাবতে পারা যায়নি। মামার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে দৌড়েছিলাম। দিদিমা যে সেই খবরে এতটাই ভেঙে পড়েছেন বোঝার অবকাশ হয়ে ওঠেনি।”
বুধবারই বিকালেই সৎকার হয়েছে রাজকুমারের কিন্তু নিয়মমাফিক মায়ের লাশ তখন পুলিশের হাত ধরে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তের পর সেই লাশ যাবে সাউরি গ্রামের শ্মশানে, ছেলের চিতার ঠিক পাশেই তাঁকে দাহের আয়োজন করেছেন গ্রামবাসীরা। ফের কাঁচা বাঁশের চৌদলা বানিয়ে বৃদ্ধার শ্মশানযাত্রার আয়োজন। বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, “মামা ও দিদিমার মৃত্যুর পর গোটা পরিবারটাই অথৈ জলে পড়ে গেল। আমার মামাতো ভাই সদ্য ইলেভেনে উঠেছে আর বোন ক্লাশ এইট। অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ।”