নিজস্ব সংবাদদাতা : পাঁশকুড়া: মদ্যপদের তান্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল জেলাগুলির মধ্যে করোনা পরিষেবা প্রদানকারি সেরা হাসপাতাল বড়মা-শিরোনা লেভেল ফোর করোনা হাসপাতাল। ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি মদ্যপদের আক্রমণে আহত হয়েছেন দুই চিকিৎসকও। রবিবার গভীর রাতে পূর্বমেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গভীর রাতে ঘন্টা খানেকের তান্ডবের পর পাঁশকুড়া থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার মদ্যপ যুবককে। এঁদের মধ্যে তিনজন কলকাতা ও একজন পাঁশকুড়া এলাকার বাসিন্দা বলে পুলিশ জানিয়েছে। এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আগামীকাল তাদের তমলুক জেলা আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, রবিবার পাঁশকুড়ার একটি অতিথি নিবাসে অনুষ্ঠিত অন্নপ্রাশনে আমন্ত্রিত ছিলেন কলকাতার কয়েকজন। পরে সেখানে কয়েকজন মিলে মদ্যপান করেছিল যার মধ্যে বছর পঁচিশের যুবতী অতিরিক্ত মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন ওই যুবতী।তাঁকে একটি গাড়িতে নিয়ে হাসপাতালের সন্ধানে বের হন তাঁর কয়েকজন মদ্যপ সঙ্গি। জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত করোনা-শিরোনা (Baroma-Sirona Hospital ) চলে আসেন তাঁরা এবং দাবি করেন অসুস্থ যুবতীর চিকিৎসা করাতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেন বর্তমানে হাসপাতালটি কোরোনা হাসপাতলে রূপান্তরিত হওয়ায় অন্য রোগির চিকিৎসা করা সম্ভব নয়।
কিন্তু মত্ত যুবকের দল তাঁদের সঙ্গিনীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বচসা জুড়ে দেয় কর্তৃপক্ষের সাথে। এরপর হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করেই ওই যুবতীকে নিয়ে চলে যান সোজা তিনতলায় আইসিইউ সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে চিকিৎসকদের বলেন যুবতীর চিকিৎসা করতে। কিন্তু চিকিৎসকরা রাজি না হওয়ায় তাঁদেরকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি নির্বিচারে ভাঙচুর করা হয় হাসপাতালের চেয়ার টেবিল ডেস্ক এমনকি মনিটর মেশিনও।
ঘটনার খবর পেয়েই ছুটে আসে বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশ এসেছে শুনে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠে মদ্যপদের দল। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। করোনা হাসপাতাল বলে সংক্রমনের কারনে পুলিশ হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ না করে হাসপাতাল থেকে থেকে পুলিশের তরফে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করে। সম্ভবতঃ এটাকেই পুলিশের দুর্বলতা ভেবে নিয়ে যুবকরা হাসপাতালের ভেতরে থাকা দুটি আই সি ইউ মেশিন ও আসবাবপত্র ও ভেঙ্গে দেয়। এর পরেই পুলিশ বাইরে থাকা কয়েকজনকে আটক করে। ততক্ষণে নেশার ঘোর কাটতে শুরু করে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন অভিযুক্তরা। গ্রেপ্তার করা হয় চার যুবককে। এদিকে জেরে তাণ্ডবের জেরে হাসপাতালের ভেতরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ভর্তি থাকা শ’খানেক রোগি, চিকিৎসক থেকে নার্স সকলেই।
করোনা হাসপাতালের অন্যতম আধিকারিক দেবোপম হাজরা জানান, রাত বারোটা নাগাদ ১০-১২জনের একটি দল হঠাৎই নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করে হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে। প্রত্যেকেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। কোভিড হাসপাতালে একজন সাধারণ রোগীকে ভর্তি নেওয়া যায় না। যে কারণে আমরা আপত্তি জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু নেশার ঘোরে তারা সেটুকু বোঝার মতো অবস্থায় ছিলেন না। চিকিৎসা করতে রাজি না হওয়ায় দুই চিকিৎসককে মারধর করেছে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গভীর রাতে এ ধরনের ঘটনায় চিকিৎসক থেকে নার্স সবাই আতঙ্কিত। আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। পুলিস এসে কয়েকজনকে ধরেছে। আমরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছি। অসুস্থ রোগীনিকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে।
পাঁশকুড়া থানার ওসি অজয় মিশ্র জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই চার যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে তাদের একটি গাড়িও। হাসপাতালের সামনে চব্বিশঘন্টার একটি পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে তারাই প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। ভবিষ্যতে ক্যাম্পে নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।