নিজস্ব সংবাদদাতা:আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবার ঝাঁটা আর জুতো নিয়ে বনগাঁয় বিক্ষোভে সামিল হলেন কয়েকশ মহিলা। মাত্র ২৪ ঘন্টা পেরিয়েছে নবান্নে হয়ে যাওয়া বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং স্বীকার করে নিয়েছিলেন দুর্নীতি হচ্ছে আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে।বলতে বাধ্য হয়েছেন, যাঁরা ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁরা আবেদন করতে পারবেন। বলেছেন, ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি বরদাস্ত করবেন না। আর বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন জনতা। আর তারমধ্যেই নজর কাড়ল বনগাঁ, যেখানে কয়েকশ মহিলাকে দেখা গেল ঝাঁটা আর জুতো হাতে ক্রোধে ফেটে পড়তে।
এদিনের বিক্ষোভে মহিলারা যেমন ঝাঁটা আর জুতো হাতে ছিলেন তেমনি ছিলেন সাধারন মানুষও। স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির বিক্ষোভ দেখানোর সময় তেড়ে এসেছিলেন পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে। চুলের মুটি ধরে, চড় আর থাপ্পড় খেয়ে ঘরে ঢুকে যান তিনি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ ব্লকের ধর্মপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতটি পরিচালনা করে তৃণমূল কংগ্রেস। এই পঞ্চায়েত এলাকার শুকপুকুরিয়া গ্রামে এদিন তৃণমূল সদস্যের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখতে এসে বৃহস্পতিবার গ্রামবাসীরা সঙ্গে এনেছিলেন ক্ষতিপূরনের তালিকা। সেই তালিকা ধরেই গ্রামবাসীরা জানান, ক্ষতিপূরণ পাওয়া প্রায় ৫০ জনের তালিকায় অন্তত ১৫জন এমন ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন যাঁদের ঝড়ে কোনও ক্ষতি হয়নি। তারা তৃণমূল কর্মী। গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল মল্লিক জানান, ‘‘একই পরিবারে দু’জনের নামে টাকা এসেছে বলে তালিকায় উল্লেখ রয়েছে। যা দেখে গ্রামের মানুষের ক্ষোভ এদিন আছড়ে পড়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে।’’
গ্রামবাসীরা নাম করে বলেছেন, আদিত্য মল্লিক যেমন ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন তেমনি তাঁর ছেলে সন্দীপের নামেও ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়েছে। এমন পেয়েছেন বিনয় বিশ্বাস ও তার ছেলে রাজীব বিশ্বাস। আছে আরও। এছাড়া পাকা বাড়ির মালিক আমফানে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে তাদের নামেও দেওয়া হয়েছে টাকা। রামচন্দ্র বিশ্বাস, অলক বিশ্বাস, রামপদ পাল, লক্ষ্ণণ বিশ্বাস, উৎপল মল্লিক সকলেই পাকা বাড়ির মালিক। এঁদের নামেও ঢুকেছে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার টাকা করে। কোনও ক্ষতি হয়নি তবে কেন তাঁদের টাকা পাইয়ে দেওয়া হল?
শুকপুকুরিয়া গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল দে-র বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষতিপুরণের তালিকায় একই পরিবারের দুইজনকে ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও গ্রামের অনেককে নাকি তিনি বঞ্চিত করেছেন। ক্ষুব্ধ মহিলারা অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে ঝাঁটা, জুতো নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিচার চেয়ে গ্রামের মানুষ ব্লক অফিসে আসবেন বলেও এদিন জানিয়েছেন।
এদিন কাঁথি, রামনগর, খেজুরি, নন্দকুমারের মতো পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন গ্রামবাসীরা। মানুষ নন্দকুমারে ব্লক অফিসের গেট খুলে ঢুকে পড়েন।বিক্ষোভ হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রতি বুথে ৪ জনের কমিটি করতে হবে। ক্ষতিপূরণ প্রাপকদের নামের তালিকা বুথস্তরে টাঙিয়ে দিতে হবে। আমফানের ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি দলবাজি বন্ধ করতে হবে।আত্মসাৎকারীদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ব্লক অফিসের সংলগ্ন এলাকা।