নিউজ ডেস্ক: নির্বাচনী লড়াইয়ে পরাজিত হতেই প্রকাশ্যে বিজেপির অন্তর্কলহ; তবে এবারে আর কর্মী-সমর্থকেরা নন, একে ওপরের দিকে আঙুল তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন দলের শীর্ষ স্তরের নেতারাই। তারকা প্রার্থীদের সামনের সারিতে রেখেও মেলেনি ফল, বঙ্গে নির্বাচনে ধরাশায়ী বিজেপি। এমতাবস্থায় হারের মূল কারণ হিসেবে তারকা প্রার্থীদেরই কাঠগড়ায় তুললেন তথাগত রায়।
তারকা প্রার্থীদের নির্বাচনী টিকিট দেওয়া নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বিস্ফোরক ট্যুইট করেন তথাগত রায়ের। এই সব তারকাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ বরানগর থেকে পার্নো মিত্র, বেহালা পশ্চিম থেকে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, বেহালা পূর্ব থেকে পায়েল সরকারকে নির্বাচনে টিকিট দিয়েছে বিজেপির নির্বাচনী কমিটি। তিনি দাবী করেন, এই মহিলারা রাজনৈতিকভাবে এমনই বুদ্ধিহীন যে তাঁরা তৃণমূলের নেতা মদন মিত্রের সঙ্গে স্টিমারে চেপে প্রমোদ ভ্রমণে গিয়েছিলেন নির্বাচনের মাত্র একমাস আগে। এমনকী তাঁর সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন। এঁরা প্রত্যেকেই হেরে ভূত হয়েছেন।
তথাগত রায়ের প্রশ্ন, পার্নো মিত্র অবশ্য প্রমোদ ভ্রমণে যাননি, কিন্তু এই মহিলাদের কী গুণ আছে? এঁদের টিকিট কে দিয়েছিল? কেনই বা দিয়েছিল? তার আরও প্রশ্ন, ‘এটা ভুলে গেলে চলবে না যে বিজেপির টিকিট পেলে নির্বাচনের কাজের জন্য যথেষ্ট অর্থও পাওয়া যায়। এর কি অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে তাহলে? তাঁর সংযোজন, ‘কৈলাস, শিবপ্রকাশ, দিলীপ, অরবিন্দ প্রভুরা একটু আলোকপাত করবেন কী?’
এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিজেপির বঙ্গ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমি পালানোর রাজনীতি করি না। কেউ কল্পনার জগতে থাকতেই পারেন। কিন্তু, আমরা বাস্তবে লড়াই করেছি।’ দিলীপের আরও বক্তব্য, এটা অসম যুদ্ধ। আজ পর্যন্ত রেকর্ড সিট আমরা জিতেছি। যেটা কেউ কল্পনা করেননি। আমরা এখনও লড়াই করছি। যে কর্মীরা হাতে প্রাণ নিয়ে লড়াই করছেন আমরা তাঁদের সঙ্গে আছি। আগামী দিনেও লড়ব।‘ আশাবাদী দিলীপের দাবী, ‘আগের থেকে ভাল ফল হয়েছে। আজ নয়তো কাল পরিবর্তন হবেই।’
তথাগতর ট্যুইট নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা রাহুল সিনহাও। রাহুল বলেন, “এখন কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর দরকার। কর্মীদের উদ্ধার করা দরকার। এটাই প্রথম কাজ। পরে হারার বিভিন্ন কারণের ময়নাতদন্ত করা যাবে।”
কথা শোনাতে ছাড়েননি বিজেপির তারকা প্রার্থী শ্রাবন্তীও। শ্রাবন্তী বলেন, ‘উনি প্রমাণ করুক আমরা টাকা নিয়েছে। মহিলা সম্পর্কে এমন মন্তব্য করছেন। একজন সিনিয়র নেতা হয়ে কী করে বলেন?’
তবে বিষয়টি বেশ মজার ছলেই নিয়েছেন তৃণমূল নেতা মদন মিত্র। তথাগত রায়কে কটাক্ষ করে মদন মিত্র বলেন, আমি রাজনীতির প্লেবয়। তাই সবাই আমার কাছে আসে। ওনাকে ডাকিনি বলে রাগ? পরের বার ওনাকেও ডাকব। হাসি হাসি মুখে মদন আরও বলেন ‘আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, পরের বারের নৌকাবিহারে আমি আপনাকে ডাকব। অবশ্যই ডাকব। সত্যি বিজেপির অন্যায়, একে নির্বাচনে প্রার্থী দেননি, বিভ্রান্ত করেছেন। উনি কতটা কষ্ট পেয়েছেন, অন্তত নৌকাবিহারে যদি গিয়ে থাকতেন।’
উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এক ঝাঁক তারকা যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল ও বিজেপিতে। তবে তৃণমূলের তারকা প্রার্থীরা জয় লাভ করলেও বিজেপির তারকা প্রার্থীরা মুখ থুবড়ে পরেছেন বেশির ভাগই। আর এই নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিজেপির ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়।