শশাঙ্ক প্রধান: সোমবার, পূর্ব ঘোষণা মোতাবেক বালিচক রেলস্টেশনের উত্তর প্রান্তের বছর বন্যা পরিস্থিতির স্থায়ী সমস্যা সমাধানের দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ মিছল এবং বিডিও-র নিকট ডেপুটেশন কর্মসূচি পালন করলেন ভুক্তভোগী মানুষ ও বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটি।
স্টেশনের উত্তর দিকে ভোগপুর এবং রঘুনাথপুর, কুমোরপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন প্রতিবছর একটু বৃষ্টি হলেই জল বন্দি হয়ে পড়েন। রাস্তাঘাট জলের তলায় চলে যায়। অনেকের বাড়িতে জল ঢুকে যায়। জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এ বছরও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সোমবার ডেবরা বিডিও অফিসে ডেপুটেশন প্রদান করে আন্দোলনকারীরা।
বালিচক স্টেশন উন্নয়ন কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই এলাকায় যেভাবে বছর বছর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেল দপ্তর এবং রাজ্য প্রশাসনের কাছে বহু মানুষের স্বাক্ষরসহ একাধিকবার বিক্ষোভ, ডেপুটেশন, আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে কিন্তু মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া আজও তার স্থায়ী সমাধান হয়নি। যে ছোট নালাটির মধ্য দিয়ে জল নিকাশির ব্যবস্থা রয়েছে সেই নালাটি আবর্জনা এবং পাওয়ার হাউসের দেওয়াল ভেঙে পাথর খণ্ডে প্রায় পরিপূর্ণ। বর্ষার পূর্বে সেটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। রেল দপ্তরে বারবার দাবি জানানোর পর রেলের পাওয়ার স্টেশনের উত্তর দিকের জল নিকাশির নালাটি সংস্কারের কাজ শুরু হয় কিন্তু আজও তা সম্পন্ন হয়নি।
সেই কারণে কমিটি দাবি করে সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের জন্য ঐ নালাটিকে প্রশস্ত করতে হবে এবং বালিচক রেলক্রসিংয়ের উত্তর দিকে পাকা রাস্তার নিচ দিয়ে জল নিকাশির জন্য ক্যালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। কুমোরপুর থেকে বালিচক রেলস্টেশন পর্যন্ত রেললাইনের উত্তর দিকের প্রধান রাস্তাটি নিচু হওয়ায় একটু বর্ষাতেই প্রায় ডুবে যায়। সেই রাস্তাটিকে উঁচু ও চওড়া করে পাকা বা কংক্রিটের ঢালাই করে নির্মাণ করতে হবে। এব্যাপারে রেল দপ্তরের পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কমিটির পক্ষে রাজ্য প্রশাসনের কাছে দাবি করা হয় রেল বিভাগের এক্তিয়ার ভুক্ত সে বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনকে রেল দপ্তরের কাছে জোরালো দাবি জানাতে হবে। কমিটি রেল দপ্তরের কাছেও নিজেদের দাবি রেখেছে । সোমবার ফের ডেবরা ব্লকের বিডিও-র কাছে দাবি জানানো হয় যে,
১) রেলস্টেশনের উত্তর দিকে ভোগপুর এবং রঘুনাথপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বছর বছর বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২) রাজ্য প্রশাসনকে উদ্যোগী হয়ে রেলের এলাকায় প্রশস্ত নালাসহ স্থায়ী জল নিকাশির জন্য রেল বিভাগের কাছে দাবি জানাতে হবে।
৩) রেলক্রসিংয়ের ঠিক উত্তর দিকে পাকা রাস্তার নিচ দিয়ে দুটি সরু চোঙের পরিবর্তে বড় ক্যালভার্ট নির্মাণ করে জল নিকাশির স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
৪) বর্ষার আগে নিয়মিত নালাগুলির সংস্কার করতে হবে।
৫) ভোগপুর, রঘুনাথপুর এবং কুমোরপুর থেকে বালিচক রেলস্টেশনে যাওয়ার প্রধান রাস্তাটিকে উঁচু করে পাকা বা কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।
৬) বালিচক পাওয়ার স্টেশনের উত্তর দিকে জল নিকাশির সরু নালাটিকে যথেষ্ট চওড়া করে উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
ডেবরা ব্লকের বিডিও পিন্টু ঘরামি এবং ডুঁয়া অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান উৎপল সুরের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয় । কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কিঙ্কর অধিকারী, কালিশংকর গাঙ্গুলী, ভারত রঞ্জন দে, বিশ্বজিৎ ভূঁইয়া চতুর্ভুজ মাইতি এবং অশোক কুমার সামন্ত। বিডিও পিন্টু ঘরামি এবং প্রধান উৎপল সূর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কয়েকদিনের মধ্যে জল নিকাশির জন্য নালা গুলি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং স্থায়ী সমস্যার সমাধানে রেল দপ্তরের নিকট কেবল চিঠি নয় ডিআরএমের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎ করে সমস্যাটি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অতিসত্বর মহকুমা শাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করবেন বলে বিডিও কথা দিয়েছেন।
জল নিকাশির স্থায়ী সমস্যার সমাধানে রাজ্য প্রশাসনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে একথা স্বীকার করে বিডিও এবং প্রধান বারবার তাঁদের আর্থিক অসহায়তার কথা তুলে ধরেন। এতে কমিটির প্রতিনিধিরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অন্য সমস্ত ক্ষেত্রে অর্থ থাকলেও এলাকাবাসীর এই দুর্বিসহ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অর্থ নেই এ কথা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দীর্ঘদিনের এই সমস্যাটি সমাধানের প্রশাসন যদি অতি দ্রুত কার্যকরী ভূমিকা পালন না করেন তাহলে এলাকাবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিটি।