নিউজ ডেস্ক: বঙ্গে আবারও নতুন রেকর্ড মারণ ভাইরাসের। সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হলেন ১৫ হাজার ৯৯২ জন এবং ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬৮ জনের। শুধুমাত্র তিলোত্তমা ও উত্তর ২৪ পরগনা মিলিয়েই এদিন আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ৭ হাজার। কলকাতায় একদিনে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৬৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৪২৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় মোট মৃত ১১ হাজার ৯ জন এবং মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৪২ জন। রাজ্যে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯৪ হাজার ৯৪৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন, ৬ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৮৪ জন।
রাজ্যে করোনার এই বাড়াবাড়ি চিকিৎসকদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তাঁদের মতে জুন মাস পর্যন্ত রাজ্যে করোনার এভাবেই দাপিয়ে বেড়াবে। করোনার চেন ভাঙতে না পারলে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে, আটকানো যাবে না মৃত্যু মিছিল- এমনটাই বলছেন চিকিৎসকরা।
মূলত নির্বাচনী প্রচারের বিষয়টিকেই পশ্চিমবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার জন্য দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, “কী ভেবে নির্বাচন কমিশন করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা রাজ্যে শুরু হওয়ার পরও এই ৮ দফায় নির্বাচন করল সেটা বোঝা যাচ্ছে না।” এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক কুনাল সরকার বলেন, “সংবিধানে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যাতে করোনা চলার সময় দুপুর রোদে ৭ লক্ষ লোক নিয়ে ব্রিগেডে সভা করতে হবে। সংবিধানের এমন কোনও বাধ্যবাধ্যকতা নেই যার জন্য কোনও সংকীর্ণ গলি পথ দিয়ে হাজারে হাজারে মানুষের মিছিল নিয়ে যেতে হবে কোনও বীজগত যৌবনার সঙ্গে। আসলে যাদের জন্য গণতন্ত্র সেই মানুষের দশরথ দেখা হচ্ছে না। নির্বাচনের নামে মানুষদের বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন নেতারা আর নির্বাচন কমিশন।
তিনি আরও বলেন, “২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য নির্বাচন কমিশন ২৯৫ দফায় নির্বাচন করতেই পারে, সেটা তাদের বিষয়। আমি বলছি এই করোনার প্রবল সংক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে এভাবে নির্বাচন করলে করোনা বাড়বে, যেটা এখন হচ্ছে। তাই এর থেকে মানুষদের বাঁচাতে, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঠিক রাখতে যে কোনও ভাবে করোনার চেনটাকে ভাঙতে এখন হবেই, না হলে মৃত্যু হবে আর আমাদের অসহায়ের মতো সেটা দেখতে হবে।”
শুধু চিকিৎসকেরাই নন, গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট ও সোমবার মাদ্রাজ হাইকোর্ট রীতিমত নির্বাচন কমিশনকে তুলোধনা করেছেন এই বিষয়ে। নির্বাচন কমিশনকেই রাজ্যে করোনা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন তারা। সোমবার মাদ্রাজ হাইকোর্ট তো এও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, গণনার দিন কোভিড প্রোটোকল মানা নিয়ে কী ভাবছে কমিশন? কড়া পদক্ষেপ যদি কমিশন না নেয়, তবে আগামী ২রা মে’ গণনা বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর হাইকোর্টের এই রায়কে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের চিকিৎসক মহল।