অশ্লেষা চৌধুরী: পাহাড় দখল যতটা মোলায়েম হবে বলে মনে করেছিলেন বিমল গুরুং আর রোশন গিরিরা বাস্তবে অবস্থা তার অনেকটাই বিপরীত। বরং আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে প্রকাশ্যে আসার পর ক্রমশঃ গুরুং বিরোধী মনোভাব প্রকট হচ্ছে। বিনা যুদ্ধে বিনয় তামাংরা যে জমি ছাড়বেননা সেটাই বোঝা যাচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা ব্যানার্জী তথা মূখ্যমন্ত্রীর কাছে শক্তি পরীক্ষা দিতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে তোপ দেগেই চলেছেন।
সেই প্রতিযোগিতার রেশ ধরেই বোধহয় এবার পোস্টার পড়ল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রাক্তন প্রধান বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে। ‘কার্শিয়াং জনতা’র নামে ওই পোস্টারগুলো লাগানো হয়েছে। আর এ নিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে চাপা গুঞ্জন।জানা গিয়েছে, কার্শিয়াং শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় লাগানো হয়েছে পোস্টার, যাতে দাবি করা হয়েছে বিমল গুরুং কার্শিয়াংকে ‘শৌচালয়’ বলে অপমান করেছেন, যাঁর জবাব কার্শিয়াংবাসী দেবেন। ঘটনা হচ্ছে যাঁরা দার্জিলিংয়ে যান বা সেখান থেকে ফেরত আসেন, তাঁরা কার্শিয়াংয়ে শৌচালয় ব্যবহার করার জন্য ক্ষণিকের জন্য থামেন।
নেপালি ভাষায় লেখা ওই পোষ্টার গুলিতে বলা হয়েছে,” ২০১৭ সালে যে লোকটা নিজেই পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেই তিনি এখন বলছেন, কার্শিয়াং শৌচালয়ের জায়গা। এই ব্যাপারে কার্শিয়াংয়ের চিন্তা করা উচিৎ।” যদিও বিষয়টিকে বিকৃত করে বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে এমনটা দাবি করে বিমল পন্থীরা বলেছেন, কয়েকদিন আগে একদল যুবক বিমলের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গেছিল। তখন বিমল তাঁদের বলেছিলেন, “আমি কার্শিয়াংয়ের উন্নয়ন করব। দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ লোকই কার্শিয়াংকে শৌচালয় হিসেবে ব্যবহার করেন। আমি ফিরে এসেছি এবং কার্শিয়াংকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আমি রোপওয়ে তৈরি করেছিলাম কিন্তু সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।”
বিমল শিবির এও দাবী করে, তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত করে দেখানো হচ্ছে। তাঁর বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকেই এমন করা হচ্ছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তরজা । তিনবছর পর বিমলের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ দেখা যাচ্ছিল, চড়ছিল রাজনৈতিক পারদ। বিমলপন্থী ও বিনয়পন্থীদের মধ্যে বাড়তে থাকে পাল্টা বাদ-বিবাদ, শুরু হয় বিমলের বিরুদ্ধে পাহাড় জুড়ে মিটিং মিছিল। ওঠে বিমল গো ব্যাক স্লোগান।
গত ৬ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে জনসভার পাশাপাশি ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গায় সভা করে বিজেপিকে তূলোধনা করে মুখ্যমন্ত্রীকে পুনরায় বাংলার মসনদে বসানোর সবরকমের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। এবারে ৭ জানুয়ারি কালিম্পংয়ে বিমল গুরুং জনসভা করবেন বলে জানা গিয়েছে। তার আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কালিম্পং। মোর্চার বিনয়পন্থী যুব সংগঠনের নেতা কুণাল প্রধান বিমলকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, যদি আপনার ক্ষমতা থাকে তা হলে কালিম্পং এসে দেখান, আমি আপনাকে কালিম্পং চিত্রা (কালিম্পংয়ের প্রবেশ দ্বার) পেরোতে দেব না। অবশ্য বিমল গুরুংয়ের নাম তিনি মুখে আনেননি।এবার আগামী ৭ জানুয়ারি বিমলেরর সভা ঘিরে পাহাড়ের রাজনীতি কোন রূপ নেয়, এখন সেটাই দেখার।