নিজস্ব সংবাদদাতা: গরম যত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ততই উত্তপ্ত হচ্ছে বাংলার রাজনীতি কিন্তু তারও চেয়ে উত্তপ্ত বোধহয় পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং যেখানে মেজাজ গরম করার এককে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থীদের পেছনে ফেলে দিয়েছেন এখানকার তৃনমূল প্রার্থী রাজ্যসভার সদস্য ডাঃ মানস রঞ্জন ভূইঁয়া। প্রচারে নেমে জনসাধারণের নানা প্রশ্নের মুখে পড়ে ক্রমশ মেজাজ হারাচ্ছেন এলাকার প্রাক্তন ও দীর্ঘদিনের বিধায়ক বর্ষীয়ান এই নেতা এমনটাই দাবি অনেকের। জনসমক্ষেই কখনও কর্মীদের চড় মারছেন তো কখনও কানে আঙুল দেওয়া গালাগালি। সম্প্রতি তেমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়েই আর তাতেই আরও চাপ বাড়ছে এলাকার তৃনমূলের কারন বিরোধীরা প্রচার ইতিমধ্যেই ওই ভিডিও ধরে প্রচার করতে শুরু করেছে যে, হার নিশ্চিত জেনেই মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছেন তৃনমূল প্রার্থী।
প্রাক্তন মন্ত্রী মানস ভূঁইয়ার এরকম বেশ কয়েকটি ভিডিও রয়েছে যাতে তাঁর মেজাজের ওপর রাশ আলগা হচ্ছে বলে বোঝাই যাচ্ছে তবে সোমবার সবংয়ের বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রচারে গিয়ে মানস ভূইঁয়া যা করেছেন বলে ওই ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নজরে পড়েছে তাতে স্পষ্টতই ধরা পড়েছে যে জীবনের সব চেয়ে কঠিনতম প্রতিদ্বন্দিতায় পড়তে চলেছেন বলেই মনে হয়েছে তাঁর। মাত্র বছর দুয়েক আগে মানস ভূঁইয়ার তৃনমূলে আসার পরই সবংয়ের আদি তৃণমূলের ৮০ শতাংশই বর্তমানে বিজেপিতে আর অন্যদিকে বাম-কংগ্রেসের ভোটে জিতে ২০১৬সালে বিধানসভায় যাওয়ার পর তৃনমূলে যোগ দেওয়ার সবংয়ের পুরানো কংগ্রেস ও ডানপন্থী অংশ গদ্দার ঠাউরে পাশ থেকে সরে গেছে তাঁর।
এদিকে নিজে তৃনমূলে যাওয়ায় সবং আসনে নিজের স্ত্রীকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন তিনি। তৎকালীন তৃনমূল নেতা তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী যিনি সেই বৈতরণী পার করানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনিই নিজেই পরে ফাঁস করে দিয়ে বলেছেন গীতা ভূঁইয়াকে জিতিয়ে আনার ক্ষেত্রে গোটা সবং জুড়েই ভোট লুট করা হয়েছিল। অর্থাৎ মন্ত্রী নিজেই সেই ভোট লুটের সহায়ক ছিলেন। ২০১৮ পঞ্চায়েতেও ব্যাপক ভোট লুট হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে এই এলাকায় তৃনমূলের পুকুরে ঠিক কতটা মাছ রয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছেননা তৃনমূলের সবং নেতারা। এলাকায় গেলেই তাই জনগন চেপে ধরলেই ক্ষেপচুরিয়াস অবস্থা হয়ে যাচ্ছে এমনটাই দাবি করছেন বিরোধীরা।
সোমবার এমনই একটি ঘটনার ভাইরাল ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে ঘটনাটি ঘটেছে সবং পঞ্চায়েত সমিতির বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুলভেড়ি এলাকায়। মানস ভূইঁয়া নিজস্ব কর্মীদের নিয়ে ওই এলাকায় প্রচারে গেছিলেন। তখন স্থানীয় তফসিলি জাতিভুক্ত মানুষজন তাঁর কাছে জানতে চান যেন এতদিন হয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা কেন সরকারি সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেননা? আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি? মানস ভূইঁয়া বলেন আপনাদের বেশিরভাগই বাড়ি পাওয়ার যোগ্য এবং শীঘ্রই পেয়ে যাবেন। মানুষজন বলেন, তাঁরা বাড়ি পাবেন এটা তারাও জানেন কারন তাঁদের তালিকায় নাম রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল তাসত্ত্বেও কেন এতদিন তাদের ঘর হয়নি? কেউ কেউ অভিযোগ করেন ‘কাটমানি’ না দেওয়ার জন্যই কী তাঁদের বাড়ি হচ্ছেনা?
মানস ভূইঁয়া এরপরই তাঁর কর্মীদের কাছে জানতে চান কতজনের বাড়ি এসেছে এই এলাকায়? কর্মীরা জানান প্রায় ২৫০জনের কাছাকাছি। কিন্তু সরকারি দপ্তর তালিকা দেয়নি। এরপরই ভূইঁয়া বলেন, বিষয়টা কেন আমাকে জানানো হয়নি। বলেই এক কর্মীকে হাতের মোবাইল দিয়ে গালে মারেন। এরপরই তিনি বলেন, ‘তফসিলি জাতিদের জন্য মমতা ব্যানার্জী যা করেছেন তা কোনোও…. বাচ্চাই করেনি।’ স্থানীয় কয়েকজন মহিলা তাঁকে বলেন, আমার ভাঙা বাড়ি দেখে আসবেন চলুন ইত্যাদি ক্ষোভ বিক্ষোভ চলতে থাকে। শেষ অবধি অবশ্য জনতাকে প্রবোধ দিয়ে এলাকা ছাড়েন মানস। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, মহিলা এবং ছোট বাচ্চাদের সামনে মানস ভূইঁয়া যে সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করেছেন তা কোনও ভদ্র মানুষের শোভা পায়না।
অন্যদিকে মানস ভূঁইয়ার এক অনুগামী জানিয়েছেন, ” দেখুন বিরোধীদের পক্ষ থেকে দাদাকে অপদস্থ করার একটা চেষ্টা চলছে। তারমধ্যেও দাদা অনেক ঠান্ডা মাথায় বিষয়গুলি অতিক্রম করার চেষ্টা করছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দাদা মেঠো ভাষায় কথা বলেন। এইসব অপপ্রচার করে মানুষকে এটা ভোলানো যাবেনা যে সবংয়ের যা কিছু ভালো, যা কিছু উন্নয়ন তা মানস ভূঁইয়ার হাত ধরেই হয়েছে।” আর সোমবারের ঘটনা প্রসঙ্গে মানসের এক সর্বক্ষণের সঙ্গীর উত্তর, ‘যারা মানসদাকে চেনেনা তাদের কাছে বিষয়টা নতুন হতে পারে কিন্তু ভোটরঙ্গে এমন আচরন মানসদাই পারেন যে আচরণে তিনি গত চার দশকের অপারেজেয় সৈনিক। মানুষ যেমন এমবিএ পড়ে যাকে বলে বিজনেস আ্যডমিন্সট্রেশন মানসদা তেমন এমভিএ মানে ভোট আ্যডমিন্সট্রেশন করেছেন।’