অশ্লেষা চৌধুরী: প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষের জের, সিঙ্গুরে মাস্টারমশাইয়ের প্রার্থী পদ বাতিলের দাবীতে করা অনশনে অংশ না নেওয়ায়, রাগে বিজেপি নেতার বাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠল দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধেই। উল্লেখ্য মাত্র ৬দিন আগে দলে আসা সিঙ্গুর আন্দোলনের মুখ মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্যকে প্রার্থী করার পরই বিদ্রোহে ফেটে পড়েছেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। নিজের দলে টিকিট না পেয়ে তৃনমূল ছেড়ে আসা ওই নেতাকে প্রার্থী করার বিরুদ্ধে অনশনের ডাক দেন তাঁরা। সেই অনশনে অংশ না নেওয়ায় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলে এবার দলীয় নেতার বাড়িতেই ভাঙচুর চালালেন ওই বিজেপি কর্মী সমর্থকরাই।
রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে ধাপে ধাপে শাসক শিবির হোক বা পদ্ম শিবিরের প্রার্থী তালিকা যত প্রকাশ পেয়েছে ততই প্রকাশ্যে এসেছে বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীদের নিয়ে দলেরই কর্মীদের অসন্তোষ ও বিদ্রোহ। ব্যতিক্রম হয়নি সিঙ্গুরেও। সেখানে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে ক্ষোভে দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন বর্ষীয়ান নেতা তথা সেখানকার অতি পরিচিত মুখ ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। আর যোগ দেওয়ার মাত্র ৬ দিনের মাথায় তিনি সেখানকার বিজেপির হয়ে টিকিট পেয়ে যান।
এই নিয়ে প্রথম থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তারা প্রথম থেকেই দাবী করে তাঁর বদলে দীর্ঘদিন দলের হয়ে কাজ করা কাউকে টিকিট দিতে হবে। এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদলের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপির একাংশ। চুঁচুড়ায় জেলা অফিসে গিয়েও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ছেলে তুষারকে ফোন করেও তাঁর বাবাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
সেখানকার নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে কোনওভাবেই প্রার্থী হিসেবে তাঁরা মেনে নেবেন না। তবে মাস্টারমশাই জানান, বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্ব যেটা বলবে তিনি তাই করবেন। কোনও ভাবেই তাঁকে সরানো যাচ্ছে না দেখে বৃহস্পতিবার বিজেপি কর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা অনশন শুরু করবেন। সেইমতো বুড়ো শান্তির মাঠে তাঁরা অনশন শুরু করেন। এদিকে হুগলি জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সঞ্জয় পান্ডে প্রথম থেকেই মাস্টারমশাইয়ের প্রার্থী হওয়ার বিপক্ষে থাকলেও তাঁকে অনশন মঞ্চে দেখা যায় না। তখন থেকে জল্পনা ছড়াতে শুরু করে তবে কি তিনি হাত মিলিয়েছেন মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে?
ব্যস এতেই ঘটে বিপত্তি। ক্ষোভে বিজেপি নেতা সঞ্জয় পান্ডের বাড়িতে ভাঙচুর করে দলের কর্মীদের একাংশই। শুক্রবার রাতে সিঙ্গুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সঞ্জয় পান্ডের বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় বিজেপি কর্মীরা। সেই দলে মণ্ডল সভাপতি গৌতন মোদকও ছিলেন বলে অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, বিজেপি এর আগে তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের মতো সিঙ্গুরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুদিন আগে তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মাস্টারমশাইকে কখনই বিজেপি কর্মীরা প্রার্থী হিসেবে মেনে নেবেন না বলে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিজেপির দপ্তর হেস্টিংসে পৌঁছে যায় সিঙ্গুরের বিক্ষোভের আঁচ। গত সোমবার হেস্টিংসে বিজেপি কার্যালয়ের সামনে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। আগুন নেভাতে ময়দানে নামেন খোদ অমিত শাহ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব।
কিন্তু বুধবার বিজেপি বাকি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতেই বিক্ষোভ যেন আরও বেড়ে যায়। সিঙ্গুরেও নতুন করে অশান্তির সৃষ্টি হয়। আর যে মাস্টারমশাইকে বিজেপি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে চেয়েছিল, তাদের সেই আশায় যে বিজেপির কর্মীরাই জল ঢেলে দিচ্ছেন, তাতে করে হাওয়া কোন দিকে গড়ায়,সেকথা ভেবেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছে পদ্ম শিবির।