Homeএখন খবর৯ পদের রান্না খেয়ে শাহ বললেন, বহুত বঢ়িয়া! মানে বুঝে লজ্জায় কুটি...

৯ পদের রান্না খেয়ে শাহ বললেন, বহুত বঢ়িয়া! মানে বুঝে লজ্জায় কুটি কুটি সরস্বতী

পলাশ খাঁ : কলাপাতায় ভাত আর রুটির সাথে ৯ রকমের পদ! স্যালাড়, লাউ মুগডালের সহ উচ্ছে ভাজা, পটল ভাজা, বেগুন ভাজা, খসলা শাকের ভাজা, শুক্তো, চাটনি ও পাঁপড়। শেষ পাতে ছিল টক দই আর নলেন গুড়ের রসগোল্লা। খাওয়ার শেষে নিজের তোয়ালে রুমালে হাত মুছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলে উঠলেন, ‘বহুত বঢ়িয়া!’ সরস্বতী স্বামীর দিকে তাকান। তিনি হিন্দি বোঝেননা। স্বামী সনাতন সিং বললেন, ‘ খুব ভাল রান্না হয়েছে বললেন।’ শুনেই লজ্জায় মাটিতে মিশে গেলেন যেন।

মাত্র দু’দিন আগেই জানতে পেরেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট মন্ত্রী অমিত শাহ তাদের বাড়িতে মধ্যাহ্ন ভোজন করবেন৷ আর জানার পর থেকেই হাত-পা ঠান্ডা হওয়ার জোগাড়! অত বড় মানুষ, স্বরাষ্ট মন্ত্রী খাবেন তাঁর বাড়িতে। প্রথমে ভেবেছিলেন স্বামীকে বলবেন, ভাদুতলার ক্যাটারারের কাছ থেকে গোটা কয়েক চেয়ার টেবিল ভাড়া করে আনতে বলবেন কিন্তু না, খবর পেলেন মাটিতে বসেই খাবেন উনি। সেই থেকে ব্যস্ততা শুরু।

স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে রং চটা বাড়িতে নতুন করে মাটি লেপে তার উপর নতুন রঙের ছোঁয়া দিয়ে লিখে দিয়েছিলেন স্বাগতম। এছাড়াও নিপুন হাতে গোটা দেওয়াল জুড়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন আল্পনা। আর এদিন সকাল থেকেই সেই সিংবাড়িতে ছিল সাজো সাজো রব। সকাল থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজনের জন্য রান্নায় লেগে পড়েন চাষীর বৌ সরস্বতী। তারপর সেই মাহেন্দ্রক্ষণে শঙখ বাজিয়ে সেদিন সাদরে নিজেদের বাড়িতে বরণ করে নেন সিং দম্পতি।
বঙ্গ সফরের প্রথমদিনেই মেদিনীপুরেই মাটিতে পা রাখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার একাধিক কর্মসূচির মধ্যে ছিল মধ্যাহ্নভোজ সারবেন প্রত্যন্ত গ্রামের এক কৃষক পরিবারে৷ সেই মতো শালবনীর কর্ণগড় সংলিগ্ন বালিজুড়ি গ্রামের কৃষক সনাতন সিং এর বাড়িতে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ পুর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুয়ায়ী এদিন দুপুর দেড়টা নাগাদ বালিজুড়ির সেই কৃষক পরিবারে পৌঁছে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কনভয় বাড়ির সামনে দাড়াতেই সিং পরিবারের মহিলা সদস্যরা শঙ্খধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে৷

দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যন্ত গ্রামের এক কৃষকের বাড়িতে আসছেন বলে কথা। তাই বালিজুড়ির কৃষক ঝুনু ওরফে সনাতন সিংয়ের বাড়িতে তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো । শুক্রবার সকাল থেকেই পদ্ম শিবিরের নেতাকর্মীদের আনাগোনা লেগেই ছিল। অমিত শাহর নিরাপত্তার জন্য বাড়ির সামনে মোতায়েন করা হয়েছিল নিরাপত্তারক্ষী। তার পর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কৃষক সনাতনের মাটির বাড়ির সামনে কনভয় আসতেই পরিবারের মহিলা সদস্যরা শঙ্খধ্বনি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

সনাতনের বাড়িতে পা রেখেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মেতে উঠেন আলাপচারিতায়। জিজ্ঞেস করেন প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধির ছয় হাজার টাকা পেয়েছেন কিনা? প্রাধান মন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছেন কিনা, সংসারই বা চলে কিভাবে৷ আলাপচারিতার মাঝেই বাড়ির সামনে থাকা খাটিয়ায় বসে পড়েন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। শুরু হয় মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন৷ সনাতন সিংয়ের বাড়ির দাওয়ার মাটিতে বসেন মধ্যাহ্ন ভোজ সারতে৷ পরিমাণে অল্প হলেও সব পদই তৃপ্তির সাথে খান তিনি। তাঁর সঙ্গে একই পংক্তিতে বসে ওই খাবার খান দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়রাও। খাওয়াদাওয়া সেরে ফের বেশ কিছুক্ষণ কৃষক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কথা বলেন সনাতনের স্ত্রী সরস্বতীর সঙ্গেও পরে সেখান থেকে রওনা দেন মেদিনীপুর কলেজ ময়দানের উদ্দ্যেশে।

আর যিনি নিজে হাতে রান্না করছেন তিনি সেই চাষীর বৌ সরস্বতী সিং জানান, ” জীবনে এতবড়ো সৌভাগ্য আমার হবে তা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারিনি। এতো বড়ো মাপের একজন মানুষ আমাদের মত গরীবের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করবেন তা কল্পনার অতীত৷ সত্যি আজ নিজেকে খুব ভাগবতী বলে মনে হচ্ছে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে পারার জন্য। আর সবচেয়ে ভাল লেগেছে আমার রান্না ওনার ভাল লেগেছে শুনে।'”

RELATED ARTICLES

Most Popular