অশ্লেষা চৌধুরী: “তোলাবাজি বন্ধে পরিবর্তন দরকার। বিজেপি বাংলার উন্নয়ন করবে। রোড শো ঐতিহাসিক। এরকম র্যালি আগে দেখিনি। মোদিজির প্রতি ভালবাসা দেখছি। হিংসা বদলে বদল জরুরি। ভাইপোর দাদাগিরি বন্ধ হবে।” রাজ্যের লাল মাটির শহরে মেগা রোড শোতে এভাবেই শাসকদলের উদ্দেশ্যে সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অমিত শাহের বঙ্গ সফরের আজ দ্বিতীয় দিনে বীরভূম সফর। এদিন সকালে নিউটাউনের হোটেল থেকে কলকাতা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বোলপুরে পৌঁছান দুপুর পৌনে বারোটা নাগাদ। সেখানে বিশ্বভারতীর হেলিপ্যাডে নেমে গাড়ি করে বিশ্বভারতি পৌঁছান তিনি। তাঁকে স্বাগত জানান অরবিন্দ মেনন, অনুপম হাজরা, লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল সিনহা সহ বিজেপির একাধিক নেতা-নেত্রীরা। প্রথমে রবীন্দ্রভবনে ঢুকে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন অমিত শাহ। এরপর উপাসনা গৃহ, সঙ্গীত ভবন ঘুরে দেখেন।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অমিত শাহ বললেন, “আজ আমার সৌভাগ্যের দিন। আজ এক মহামানবকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি আমি, যিনি বিশ্বে ভারতীয় জ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন ও কলাকে জনপ্রিয় করেছেন।
শান্তিনিকেতনে বাউল বাড়ীতে পূজো দিয়ে বাউল গান শুনে মধ্যাহ্নভোজ সারেন রতনপল্লিতে বাসুদেব দাস বাউলের বাড়ীতে। এরপর চারটে নাগাদ বোলপুর ডাকবাংলো মোড় থেকে শুরু হয় অমিতের মেগা রোড শো। এক কিলোমিটার এই যাত্রাপথে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। একাধিক জায়গায় অমিত শাহর ওপর পুষ্পবৃষ্টি করা হয়। সেই সাথে ছিল বাউল গান ও ঢাকও।
এই রোড শোতেই অমিত বলেন, ‘বোলপুরের এই রোড শো ঐতিহাসিক। এটা মোদির প্রতি ভালবাসার প্রমাণ। বোলপুরের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’এদিন রোড শো থেকে শাসকদলকে তীব্র আক্রমণ শানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তোলাবাজি বন্ধে পরিবর্তন দরকার। বিজেপি বাংলার উন্নয়ন করবে। রোড শো ঐতিহাসিক। এরকম র্যালি আগে দেখিনি। মোদিজির প্রতি ভালবাসা দেখছি। হিংসা বদলে বদল জরুরি। ভাইপোর দাদাগিরি বন্ধ হবে।”
একই সাথে তিনি দাবী করেন, বাংলার উন্নয়ন করবে বিজেপির সরকারই। তিনি বলেন ‘যেখানে বিজেপির শাসন, সেখানেই উন্নয়ন। উন্নয়নের রাস্তা থেকে সরে গিয়েছে বাংলা।’এরপরেই মানুষের কাছে রাজ্যে পদ্মফুল ফোটানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এতদিন তো কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, তৃণমূলকে দেখলেন। কিন্তু তাতে কি অবস্থার কোনও বদল হয়েছে? বিজেপিকে একটি বার সুযোগ দিন, সোনার বাংলা গড়ব।’
তবে অনুব্রতের গড়ে অমিতের মেগা রোড শো খুব একটা মসৃণ হয়নি। অমিত শাহর সভায় আসার পথে, দুবরাজপুরে বিজেপি কর্মীদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বাইক বাহিনীর বিরুদ্ধে। বিজেপির দাবী, এদিন দশহরি গ্রামের তাদের কর্মীরা অমিত শাহর সভায় যাওয়ার জন্য জড়ো হলে আচমকাই হামলা চালায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী। বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী আহত হন বলেও অভিযোগ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। এদিন খোদ অনুব্রত অমিতের র্যালি চলাকালীন বঙ্গ ধ্বনি কর্মসূচি করেন।
তার আগে অমিত শাহের আগমনের বিরোধীতা করে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাটে প্রতিবাদে সামিল হন স্থানীয় বাসিন্দারা। পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে চলে প্রতিবাদ। বিক্ষোভে সামিল হন বাউলদের একাংশ। বিক্ষোভকারীদের দাবি, রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, এদিনের মিছিল উপলক্ষ্যে দেওয়া অমিতের কাটআউট নিয়ে আগেই তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতির ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন মহল। শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। বিতর্কিত কাটআউট নিয়ে শোরগোল পড়তেই তড়িঘড়ি তা আবার সরিয়েও ফেলা হয়।