নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রথমদফা ভোট গ্রহণের দিনেই রাজনৈতিক খুনের অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠল বাংলার রাজনীতি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ী থানার অন্তর্গত বেগমপুর গ্রামে বিজেপির এক সমর্থককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করলেন ওই বিধানসভার প্রার্থী স্বয়ং। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত ব্যক্তির নাম মঙ্গল সরেন। ৩৫ বছরের সরেন রাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। এরপর শনিবার সাত সকালে বাড়ির উঠোন থেকে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, শরীরের বিভিন্ন অংশেও কাটা ছেঁড়া বা আঁচড়ের দাগ পাওয়া গেছে।
কেশিয়াড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের এই বেগমপুর বুথ এলাকা কেশিয়াড়ী সদরের গা ঘেঁষেই হাসপাতাল সংলগ্ন পাড়ায়। ফলে সকাল থেকেই তপ্ত হয়ে রয়েছে এলাকা। এলাকায় মোতায়েন হয়েছে পুলিশ বাহিনী। মৃতের মা কচি সরেন জানিয়েছেন, মঙ্গল শুক্রবার রাত প্রায় ৯টা নাগাদ রাতের খাবার খেয়ে বাড়ির উঠোনেই চাটাই পেতে শুয়েছিল মঙ্গল। কখন তিনি বাইরে বেরিয়ে যান তাঁরা জানতে পারেনি। শনিবার ভোরে বাড়ির উঠোনেই একটি চাটাইয়ের মধ্যে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেক ডাকাডাকির পরে সাড়া না মেলায় এবং শরীরের আঘাতের চিহ্ন থাকায়। লোকজনকে খবর দেন তাঁরা। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরই দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় থানায়। এরপরই শুরু হ তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চাপান উতোর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে কর্মসূত্রে বাইরেই থাকতেন মঙ্গল। তিন-চারদিন আগেই বাড়ি ফেরেন। মদ্যপ হিসাবেও এলাকায় দুর্নাম রয়েছে। নিজের স্ত্রীকেও মারধর করতেন বলে স্ত্রী তাঁর কাছে থাকতেন না। দুটি ছেলে অবশ্য মঙ্গলের বাড়িতেই থাকত। অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে মঙ্গলের মৃগির ধাতও ছিল।
তবে গতকাল রাতে মঙ্গল বিজেপির পতাকা পোষ্টার লাগানো নিয়ে তৃনমূল কর্মীদের সঙ্গে বচসা এবং হাতাহাতি জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেও জানা যাচ্ছে। ওই ঘটনার পর অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছিল সে। যদিও উঠোনেই চাটাই বিছিয়ে হয় সে নিজে অথবা তার দলীয় কর্মীদের কেউ তাঁকে শুইয়ে দিয়েছিল। ভোরে দেখা যায় সে মারা গেছে।
কেশিয়াড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সোনালি মুর্মূর অভিযোগ, শুক্রবার রাতে তৃণমূল কর্মীরা মঙ্গলকে খুন করে বাড়ির সামনে উঠোনে ফেলে রেখে যায়। তাঁর মাথায়, ঘাড়ে আঘাত রয়েছে, আঁচড়ের দাগও রয়েছে। পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃনমূলের তরফে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পুলিশের পদস্থ কর্তারা। তদন্ত শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের তরফে রিপোর্ট পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। উল্লেখ্য শুক্রবার সকালেই শালবনী বিধানসভা এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২৪ঘন্টার মধ্যেই ফের এক রাজনৈতিক হত্যার অভিযোগে উত্তাল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা।