শশাঙ্ক প্রধান: গত অক্টোবর মাসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের একটি ট্যুইট শোরগোল ফেলে দিয়েছিল রাজ্য জুড়ে। তিনি তাঁর সেই ট্যুইটে দাবি করেছিলেন শুধুমাত্র ২০২০ সালের আগষ্ট মাসেই পশ্চিমবাংলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২২৩টি এবং অপহরণের ঘটনা ৬৩৯টি। রাজ্যপালের দাবি করেছিলেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তর তাঁর কাছে এই রিপোর্ট পাঠিয়েছে। যদিও রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই তথ্য অস্বীকার করে জানিয়ে দিয়েছিল যে এই তথ্য ভিত্তিহীন। এই তর্ক বিতর্কের মধ্যেই যে কথা অস্বীকার করা যায়না যে বাংলায় মহিলা সম্পর্কিত অপরাধ ক্রমবর্ধমান।
জাতীয় অপরাধ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা National crime record bureau রিপোর্টে সেই তথ্য ধরা পড়েছে। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় খুন হওয়া মহিলার বিষয়ে স্থানীয় থানায় এসে বিজেপির মহিলা মোর্চার সভানেত্রী বাংলায় ঘটে যাওয়া ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনাকে করোনা অতিমারির চাইতেও ভয়ানক সংক্রামক হয়ে উঠেছে বলে জানালেন।
সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানায় এসেছিলেন পাল। রবিবার এই থানারই বারুনিয়া গ্রামের ৪২বছরের এক আদিবাসী গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধার হয় বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দুরে ইসলামপুর গ্রাম লাগোয়া একটি জঙ্গলাবৃত স্থান থেকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে মহিলাকে। এই খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশের কতদূর অগ্রগতি তাই নিয়ে থানার পুলিশ আধিকারিকদের সাথে কথা বলেন মহিলা মোর্চার সভানেত্রী। সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অগ্নিমিত্রা জানান,’করোনা সেই অর্থে কতটুকু মহামারির রূপ নিয়েছে পশ্চিমবাংলায় তার চেয়েও মারাত্মক ধর্ষণের অতিমারি। হিঙ্গলগঞ্জ থেকে ডেবরা হয়ে দুর্গাপুর অতিমারি সংক্রমনের চেয়েও ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই ধর্ষণ।”
প্রাক্তন এই ফ্যাশন ডিজাইনারের দাবি, ‘ পুলিশ পুরোপুরি তৃনমূলের ক্যাডার হয়ে কাজ করছে। পুলিশ এখানে অভিযোগ নেয়না উল্টে অভিযোগ করতে থানায় গিয়ে পরিবারকে হেনস্থা হতে হয়। যদি আপনি আদালতে যান তবেই আদালতের চাপে থানা অভিযোগ নিতে পারে। চারিদিকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে এবং প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের কোথাও না কোথাও এই ঘটনা ঘটেই চলেছে যেমনটা আপনারা রবিবার এখানে দেখতে পেলেন।’
পুলিশ আধিকারিকরা অবশ্য পালকে জানিয়েছেন যে পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জানার পর যা আরও সুবিধা জনক হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে জোরদার খোঁজ চালানো হচ্ছে মৃতার মোবাইলটির যার মধ্যেই জানা যেতে পারে ওইদিন কে বা কারা ফোন করে ডেকে পাঠিয়েছিল মহিলাকে।
পুলিশ অবশ্য বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি তদন্তের স্বার্থে তবে একটি সূত্র জানাচ্ছে এই খুনের পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা কাজ করেছে এবং তার পেছনে রয়েছে জমি সংক্রান্ত বিষয়। মূল সড়কের পাশেই ওই মহিলার নামে প্রায় ১একর জায়গা রয়েছে যার বর্তমান বাজার দর প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। ডেবরার তৃনমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অলোক আচার্য্য জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে এই জমি হাতানোর চেষ্টা করতে ব্যর্থ হয়েই এই খুন করা হয়েছে।”