ওয়েব ডেস্ক : মারণ ভাইরাস করোনার থাবায় জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে আক্রান্ত হচ্ছে সকলেই। এই পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে দীর্ঘ ৩ মাস চলেছে লকডাউন। একে লকডাউন তার ওপর বন্ধ ট্রেন পরিষেবা। এই পরিস্থিতিতে কোথাও পায়ে হেঁটে বাড়ির উদ্দেশ্যে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়েছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক, কোথাও আবার বাচ্চাকে পিঠে বেঁধে ছেড়া জুতো পরে কোনোরকমে বাড়ির পথে হেঁটে চলেছে মা। শ্রান্ত, ক্ষুধার্ত মানুষগুলিকে দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল দেশবাসীর। সেই সময় আচমকা “মসিহা” হয়ে ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন ‘রিল লাইফ ভিলেন’ সনু সুদ। নিজের খরচায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের কাছে ফিরিয়েছিলেন অভিনেতা৷ কুড়িয়েছেন বহু মানুষের আশীর্বাদ৷ আনলক পর্বেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এবার মৃত এবং আহত ৪০০টি পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন বলিউডের এই অভিনেতা।
লকডাউনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে কোথাও মাইলের পর মাইল হাঁটায় কোথাও বা খাবারের অভাবে প্রাণ হারিয়েছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। তাদের অনেকেই সংসারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। ফলে একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত অসহায় ভাবে দিন কাটাচ্ছেন দেশের বহু পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার৷ এমনই ৪০০টি পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সোনু সুদ। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড এবং বিহার প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছেন তিনি। প্রশাসনের সাথে কথা বলে এরকম পরিবারগুলির তালিকা চেয়েছেন তিনি। এবিষয়ে সোনু জানায়, “আমি ঠিক করেছি আহত ও নিহত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের পাশে দাঁড়াব। তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করাই লক্ষ্য। এটাকে ব্যক্তিগত দায়িত্বই মনে করছি।”
লকডাউনের মধ্যে যখন একেবারেই বন্ধ ট্রেন পরিষেবা, সে সময়ে নিজে সংক্রমিত হওয়ার তোয়াক্কা না করে একেবারে মাঠে নেমে কেরল, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজ করতে আসা অসহায় শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সোনু। পরবর্তীকালে মহারাষ্ট্রের প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে নিজের খরচে ট্রেনে করেও বহু পরিযায়ীকে নিজের রাজ্যে পাঠিয়েছেন। আর ঠিক যে কারণেই ভিন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের ভগবান হয়ে উঠেছে সনু সুদ৷ তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে বিহারের গ্রামে স্থাপন করা হয়েছে তাঁর মূর্তি। শুধু তাই নয়, সদ্যোজাতের নামকরণ করা থেকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবিও তুলেছিলেন ‘ভগবান’ এর ভক্তরা।
কয়েকদিন আগেই মা অসুস্থ থাকায় তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরতে চেয়ে সোনুর কাছে আরজি জানিয়েছিলেন বাংলার এক শ্রমিক। বাঙালী শ্রমিকের সেই অনুরোধ রেখেছিলেন সোনু। আরজি জানানোর পরই বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন তিনি। সমস্ত ব্যবস্থা নিজেই করে দিয়েছিলেন অভিনেতা। দেশের এমন করুন পরিস্থিতিতে যখন করোনার আশঙ্কায় সাহায্য তো দূরের কথা প্রতিবেশীর সামান্য খোঁজ খবরও নিচ্ছেন না বেশ কিছু মানুষ, সেখানে একজন নামী সেলিব্রিটি হয়ে নিঃশর্তভাবে লক্ষ লক্ষ অসহায় শ্রমিক ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো স্বাভাবিকভাবেই মানবিকতার নিদর্শন বলেই মনে করছেন দেশবাসী। নিজের অজান্তেই বলিউডের ‘রিল লাইফ ভিলেন’ হয়ে উঠেছেন ‘রিয়েল লাইফ হিরো’।