✍️কলমে: আশিস মিশ্র
(পর্ব -৭)
যখন সাতদিনই রবিবার বলে মনে হচ্ছে, তখন রবিবারের আলাদা স্বাদ বাঙালি কি ভুলতে বসেছে?
করোনা মুক্তির পর বাঙালির রসবোধ নিয়ে আবার নতুন করে চর্চা শুরু হবে। তবে এই বাঙালির অনেক কিছু সত্যি কি হারিয়ে যেতে বসেছে? কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ একবার আলাপচারিতার মধ্যে বলেছিলেন, বাঙালির অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও রসবোধ হারায়নি। সে কিছু না হোক একটু রসিকতা করবে। হাসবে।
এখন এই রসসিক্ত বাঙালি কী কী করছে। ঘরে বসে বা ঘরের বাইরে এসে। ঘরের বাইরে আসা মানে যান- যণ্ত্রণা,অফিস এলে বাড়ি ফেরার চিন্তা। হাটে – বাজারে যাওয়া মানে পকেটের মাপ বুঝে কেনাকাটা, কোনটা আগে দরকার তার সূচি তৈরি ইত্যাদি ইত্যাদি। তার মধ্যে দুটি জিনিস চাই। মদের দোকানে লাইন। রেশনের দোকানে লাইন। মুখে মাস্ক বাঁধা। পকেটে স্যানিটাইজার। আর ঘরে বসে থাকলে খিটখিটে হয়ে তালগোল পাকানো। না হয় ফেসবুকের খেলায় মেতে ওঠা। মোট কথা বাঙালি সংকটকালেও বেশ রশে- বসে আছে। আর ওই রসটুকু না থাকলে যে আরও বসে যাবে, মানে বরফের মতো জমাট হয়ে যাবে –। তাই বাঙালি সর্বদা গলে গলে পড়ছে। ঢলে বা টলে পড়ছে না।
আর বাঙালি কী করছে। না নিরন্তর কাব্য সাধনা। এমন কাব্য সাধনা, যে এই লকডাউনে বাঙালির সাহিত্য চর্চা চরমে উঠেছে। মানে সর্বদা শিখরে উঠছে কবিতার বাজার। শুয়ে,বসে,খেয়ে,মেখে সে এখন কবিতা ছড়িয়ে দিচ্ছে আসমুদ্র- হিমাচল। কতো কোটি করোনা সংক্রান্ত কবিতা তা একমাত্র ফেসবুক বলতে পারবে।
এখন কথা হচ্ছে, এখন তো রবিবারের বিকেল বা সান্ধ্য আড্ডা প্রায় উঠে গেছে। আর নেই সেই “কৃত্তিবাসী” দের বুধ সন্ধ্যা। কিংবা শনিবারের আড্ডা। এখন তাই বাঙালি সব দিনকেই ফেসবুকীয় আড্ডা হিসাবে ধরে নিয়ে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে।
দুর্বলতার কোনো স্থান নেই বাঙালি হৃদয়ে। বাজার তো দুর্বল নয়। তেলের দাম বাড়ছে। মদের দাম বাড়ছে। পটল,বেগুনের দাম বাড়ছে। মাছ মাংসের দাম বাড়ছে। শুধু যা বড়েনি চপের দাম। আজও জামাইয়ের নধর চপ ৫ টাকা। দাদুর পাকা চপ ৪ টাকা। তাই চপ- মুড়ি নিয়ে যখন রবিবারের হলুদ আড্ডায় আমরা বসলাম গুটিকয়েক কাব্যসাধক,তখন ঘোষ বৌদির ঠেস– কাজ নেই তো খই ভাজ। এমন ১ লাইলের কবিতাকে আমরা এতোদিন তাচ্ছিল্য করে দেখেছি। তখন আমরাও তার জবাব দিলাম — চায়ে দিলে চিনি/ খোঁপাটি বিনুনি। মুচকি হেসে বৌদি বললো,দেখবে আর জ্বলবে/ লুচির মতো ফুলবে… আমরা হেসে গড়িয়ে পড়লাম। না আমাদের কোনো কষ্ট নেই।
( চলবে)