Homeসাহিত্যরবিয়াণীঅপেক্ষার অন্ধকার

অপেক্ষার অন্ধকার

✒️ কলমে: অভিজিৎ রায়

অপেক্ষা দীর্ঘ হলে দু-চারটে হলুদ শব্দ বন্ধ কাচের জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ে। আমি আর উদাসীন থাকতে পারি না। আমি ভাবতে পারি না ছাদের সাদা রংয়ে লুকিয়ে আছে সাতটি রং। আমি শুধু কালো মেঘের দিকে চেয়ে থাকি। কিন্তু সেও অপেক্ষার মতো অন্ধকার হতে পারে না। বৃষ্টির কাছে হেরে যায় নিভে যাওয়া বিদ্যুৎ রেখা। আগুন কি কোনোদিন নক্ষত্রের কাছে হেরেছে? আকাশ এই খবরে চঞ্চল হয়ে ওঠে। বুকের ভিতর আগুন জ্বলে উঠুক। কেটে যাক অপেক্ষার অন্ধকার।

অপেক্ষার অন্ধকার কেটে গেলেই অপেক্ষার অবসান সম্ভব নাকি উদাসীনতার চরম স্নেহে নিজেকে ভুলে যেতে এত সব শব্দের আলো আর আলোর ইন্দ্রজাল? প্রশ্নগুলো সাজানো থাকে প্রতীক্ষারত অপরিচিত চৌকাঠে। উত্তরগুলো দ্বিধা নিয়ে হেঁটে যায় জানালার সামনের গলি দিয়ে। যায় আবার ফিরে আসে। এইসমস্ত আসা যাওয়ার রুক্ষতা অপেক্ষার অন্ধকার গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে থাকে গলির মোড়ে। সেখান থেকে ধোঁয়াশায় মোড়া শব্দেরা রঙিন ডানায় ভর করে দ্রুত পালিয়ে যায় অন্ধকার জানালার পাশে চুপ করে বসে থাকা লেখার টেবিলে। খাতার উপর জমাট অপেক্ষার অন্ধকার কেটে যেতে থাকে। ধোঁয়াশার আলোছায়া কী অদ্ভুতভাবে নিজেকে অন্ধকারের উপশম বানিয়ে ফেলে তা শুধু নির্বাক যতিচিহ্নেরাই জানে।
এইসব জানার সঙ্গে বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক ছিল না। থাকে না কোনোদিনই। অথচ প্রত্যেকটি অপেক্ষার অন্ধকার শুধু আলোর বিশ্বাসেই নিজের জীবনে অটল থাকে। এই অটল বিশ্বাস তাকে অচলতার ভবিষ্যৎ থেকে রক্ষা করে। আমাদের প্রত্যেকের অপেক্ষা ক্রমশ ঘন, গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে থেকেই আলোর আরাধনায় মগ্ন থাকে। আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অন্ধকার প্রতিদিনকার উদাসীনতার আলোকে খুঁজে খুঁজে সৃষ্টির আনন্দে অপেক্ষার সঙ্গী হয়। সঙ্গীহীন এই জীবনে এটুকুও যে কম নয় তা একমাত্র কলরবের মৌনতার মতো তা প্রত্যেক সৃষ্টিশীল একলা মানুষমাত্রেই জানেন।

(চলবে)

RELATED ARTICLES

Most Popular