নিজস্ব সংবাদদাতা: মুখ্যমন্ত্রীর স্তোক বাক্যে ভুলছেনা পূর্ব মেদিনীপুর আমফানের ক্ষতিপুরন তৃনমূল নেতা ও তাঁদের ভাগ্না ভাইপোরাই লুটে নিয়েছে এমন অভিযোগে নন্দীগ্রামের পর এবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল পটাশপুর। ২০১১ র পর পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে একের পর এক বিদ্রোহ রীতিমত রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে শাসকদলের। যাকে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে অশনি সঙ্কেত বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিজেপির অভিযোগ, আমফানের ক্ষতিপূরন নিয়ে অন্য জায়গায় মত ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে পটাশপুর ২ব্লকে। এরই প্রতিবাদে বিজেপি সমর্থকদের একটি দল ব্লকের সদর দপ্তর প্রতাপদীঘিতে ডেপুটেশন দিতে যাচ্ছিল। বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি এই ডেপুটেশন দিতে যাওয়ার পথে এগরা-বাজকুল রাজ্য সড়কের মতিরামপুরে জনতার ওপর হামলা চালায় তৃনমূলের লোকজন। এরপরই রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়ে জনতা। এই অবরোধ তুলতে এলে জনতার সঙ্গে পুলিশের প্রথমে বাদানুবাদ ও হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।
পুলিশের অভিযোগ জনতা দোকান, গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট ছুঁড়তে শুরু করে। এরপরই আত্মরক্ষায় পালটা লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। অভিযোগ পুলিশ গুলিও চালায় শূন্যে।
শুক্রবার দুপুরের এই ঘটনায় আহত হয়েছেন জনতা-পুলিশের বেশ কয়েকজন। তাঁদের উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে স্থানীয় হাসপাতালে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় চলছে পুলিশি টহল। ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনায় কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি এদিন সন্ধে পর্যন্ত।তবে মারপিট -অশান্তির সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছন, এগরার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শেখ আখতার আলি। বিকেলের পর এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ঘটনায় বিজেপি-সিপিএমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন পটাশপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউ। তাঁর দাবি, গ্রামবাসীদের উস্কানি দিয়ে সিপিএম ও বিজেপিই এসব করাচ্ছে। চন্দন বলেন,’ আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত প্রাপকরাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। যাঁরা পাবেন তাঁরাও প্রকৃত ভাবেই পাবেন। তার মাঝেই বিজেপি উস্কানি দিয়ে এসব করাচ্ছে।’
একটি সূত্রে জানা গেছে, আমফান ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিতে এদিন মতিরামপুরে এগরা-বাজকুল রাজ্য সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত এই অভিযোগ তুলে বিক্ষোভেও সামিল হন তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ অবরোধ-বিক্ষোভের জেরে রাজ্য সড়কের ওপর যান চলাচল থমকে যায় । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউ। চন্দনকে দেখার পরই ক্ষেপে যায় জনতা। তাঁকে লক্ষ্য করে ছুটে যায় জনতা। চলে টানা হ্যাঁচড়া। কোনও ক্রমে রক্ষা পান তিনি।
এরপরই উত্তেজিত জনতা কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। এছাড়া অবরোধে আটকে থাকা বাস ও পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা। ঘটনাস্থলে আসে পটাশপুর থানার পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু কোনওভাবেই সরতে চাননি বিক্ষোভকারীরা। তর্কাতর্কি, হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় পুলিশের সঙ্গে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইঁট ছোঁড়াও শুরু হয়। খবর পেয়ে এগরার মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী গিয়ে পৌঁছায় এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। পরে শুন্যে গুলিও ছোঁড়ে পুলিশ।
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী অভিযোগ করেছেন, “জনতার শান্তিপূর্ন অবস্থানে বিনা প্ররোচনায় হামলা চালিয়েছে পুলিশই। তৃনমূলের লাগাম ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো জনতার বিরুদ্ধে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশকে। আর পুলিশ প্ররোচনার তত্ত্ব খাড়া করে জনতার ওপর আক্রমন নামিয়ে আছে।”