বিশেষ সংবাদদাতা:এবার পুলিশ হেফাজতে থাকা আরামবাগ টিভি ইউটিউব চ্যানেলের সম্পাদক সেখ সফিকুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি তুললেন বিশিষ্টজনেরা। দাবি তুলেছেন প্রাক্তন আমলা থেকে শিক্ষাবিদ, অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে এক সময়ে ‘রাজরোষের’ শিকার হওয়া মানুষজন পাশে দাঁড়ালেন সফিকুলের। একটি ডিজিটাল বার্তায় তাঁরা দাবি তুলেছেন, সফিকুল, তাঁর স্ত্রী আলিমা খাতুন এবং আরএক সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এই দাবি জোরালো হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।
অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন, কৌশিক সেন, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, রবীন্দ্র ভারতীর প্রাক্তন দুই উপাচার্য শুভঙ্কর চক্রবর্তী, পবিত্র সরকার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি অশোকনাথ বসু থেকে কার্টুন কাণ্ডে জেলে যাওয়া অম্বিকেশ মহাপাত্র-সহ বিশিষ্টরা পাশে দাঁড়িয়েছেন সফিকুলের।
বিশিষ্টজনেরা বলেছেন , “দরজা, জানালার তালা ভেঙে, আগাম নোটিস বা পরোয়ানা ছাড়াই সফিকুল, তাঁর স্ত্রী আলিমা খাতুন-সহ দুই শিশুসন্তানকে থানা নিয়ে আসে পুলিশ। একই কায়দায় বাড়ির দরজা ভেঙে থানায় নিয়ে আসা হয় আর এক সাংবাদিক সুরজ আলি খানকে। পরে শিশু সন্তানদের ছেড়ে দেওয়া হলেও, ১০টির বেশি ধারায় বাকি ৩ জনকে গ্রেফতার করে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ বা খুনের মত কোন গুরুতর অভিযোগ নয়, শুধুমাত্র সরকারের কাজের সমালোচনামূলক সংবাদ পরিবেশনের জন্য যেভাবে পুলিশবাহিনী বাড়ি ঘিরে, ভাঙচুর করে, দুই শিশুসন্তান সহ থানায় নিয়ে আসে, কোনওরকম কারণ না জানিয়ে, তা সংবিধান ও গণতন্ত্রের পক্ষে অশনিসংকেত।”
এপ্রিল মাসে ওই ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, লকডাউনের মধ্যেও থানা থেকে ক্লাবগুলিকে চেক বিলি করা হচ্ছে। প্রথমে পুলিশ অস্বীকার করলেও পরে কাগজে কলমে মেনে নেয় চেক বিলি হয়েছিল। সফিকুলের অভিযোগ ছিল, পুকুর চুরি হওয়া মানুষের সামনে তুলে ধরার কারণেই এই পুলিশ উঠেপড়ে লেগেছে তাঁকে জেলে পাঠাতে। সেই সময়ে অনেকে বলেছিলেন, যে ক্লাবগুলিকে পুলিশ সরকারি চেক বিলি করেছিল তার অধিকাংশের কোনও অস্তিত্বই নেই। সবটাই শাসকদলের নেতাদের লুটে খাওয়ার বন্দোবস্ত। দু’দিন আগে এ নিয়ে সরব হন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। টুইট করে রাজ্যের সাংবিধানিক টুইট করে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ করে লিখেছিলেন, “সরকারি টাকা ভুয়ো ক্লাবগুলির মধ্যে বিলি করা তুলে ধরাতে সফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার হয়েছে।” রাজ্যপাল এও লিখেছেন, “সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে রাখা মানে গণতন্ত্রের মুখ বন্ধ করে দেওয়া।”
এরপর ২৯ জুন একটি এফআইআর দায়ের হয় সফিকুল ও আরামবাগ টিভির সাংবাদিক সুরজের বিরুদ্ধে। তাতে বলা হয়, গাছ কাটা নিয়ে এক ব্যক্তিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী পুলিশকে বলেন, সুরজ তাঁকে হুমকি দেন, ৩০ হাজার টাকা না দিলে গাছ কাটার খবর ফাঁস করে দেবেন! তাঁর বক্তব্য, তিনি সুরজকে বলেছিলেন পঞ্চায়েতের নির্দেশে গাছ কাটছেন। তাও টাকা চাওয়া হয়।
অনেকের অভিযোগ, সুরজের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই মামলা সাজিয়েছে পুলিশ। তাঁদের এও বক্তব্য, বিভিন্ন খবরের জেরে প্রশাসনের উপর মহলে নাড়াচাড়া পড়ে গিয়েছিল। তাতে বাঁহাতি রোজগারে টান পড়পছিল পুলিশের। সেই জন্যই জেলে পাঠানো হয়েছে সফিকুলদের। ইতিমধ্যেই সফিকুলের মুক্তির জন্য আইনি লড়াই শুরুর প্রস্তুতি শুরু করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। এবার তাঁর পাশে দাঁড়ালেন রাজ্যের বিশিষ্টজনেরাও। যদিও বাংলার দুর্ভাগ্য এই যে ঘটনার একশ ঘন্টা পেরিয়েও মুখ খোলেনি প্রাতিষ্ঠানিক প্রেস ক্লাবগুলো।