ওয়েব ডেস্ক: গত ১ মাস যাবত আনলক ১ কাটানোর বুধবার থেকে শুরু হয়েছে আনলকের দ্বিতীয় পর্যায়। সামাজিক দূরত্ব মেনে সাধারণ মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। কিন্তু লকডাউন শেষ হওয়ার পরেও মানুষের মনের হতাশা এখনো কাটেনি। লকডাউনে কেউ চাকরি খুইয়েছেন, কারো মাথায় আবার ঋণের বোঝা, কারো কারো আবার খাবারই জোটেনি বেশ কয়েকদিন, এর জেরে আত্মঘাতী হয়েছেন বহু মানুষ। গত জুন মাসে অবসাদের জেরে শুধুমাত্র শহর কলকাতাতেই আত্মঘাতী হয়েছেন ৪৫ জন। মঙ্গলবার, ৩০ শে জুন, মাসের শেষ দিনেও অব্যাহত ছিল আত্মহত্যার ঘটনা। নিজের শরীরে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ ফুটিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক চিকিৎসক। কিন্তু কি কারণে চিকিৎসক আত্মহত্যা করলেন তা তদন্ত সাপেক্ষ।
এ ছাড়াও কয়েকদিন আগেই অভাবের তাড়নায় বিষ পান করে আত্মঘাতী হয়েছেন রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার সোনালি পার্ক অঞ্চলের বাসিন্দা বৃদ্ধা মা প্রণতি সিংহ ও তাঁর বিশেষ ভাবে সক্ষম ছোটো ছেলে। স্থানীয়দের তৎপরতায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও মঙ্গলবার মৃত্যু হয় তাদের। মা ও ভাইয়ের শেষকৃত্যের কাজ করেন বড় ছেলে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত মাসে আনলক শুরু হলেও অনেক বেসরকারি অফিসই কর্মীদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। ফলে সংসার চালানোর পায় খুঁজে না পেয়েই অনেকে অবসাদে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, দীর্ঘ তিন মাস লকডাউনের কারণে অভাব-অনটন এবং সাংসারিক চাপ মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। সেই কারণেই গত মাসে গড়িয়াহাটের হকার, অ্যাপ ক্যাবচালক, গাড়ির চালক, ছোট অফিসের কর্মচারী, অটো চালক থেকে শুরু করে অনেকেই আত্মহত্যার পথই বেছে নিয়েছেন।
অভাবের কারণের গিত মাসের শুরুর দিকে ঠাকুরপুকুরে বিষপান করে আত্মঘাতী হয়েছেন একই পরিবারের তিনজন। তবে শুধু যে অভাব অনটনের কারণেই আত্মঘাতী হচ্ছে তা কিন্তু নয়। অনেকেক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় আত্মঘাতী হয়েছেন অনেক পড়ুয়া। অনেকক্ষেত্রে আবার অনলাইন ক্লাস না করতে পারায় ফেল করার আশঙ্কায় অবসাদে ভুগতে ভুগতে আত্মঘাতী হয়েছেন একাধিক নাবালক নাবালিকা। আবার জুন মাসের শেষেই স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক নষ্টের উস্কানির অভিযোগে বেঙ্গালুরুতে স্ত্রীকে খুন করার পর কলকাতার ফুলবাগানে শাশুড়ীকে খুন করে একই পিস্তল দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন অমিত আগরওয়াল।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৭ থেকে ৩০ জুনের মধ্যেই আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। একই দিনে শহরে পাঁচটি ও সাতটি আত্মহত্যারও ঘটনাও ঘটেছে। তাদের মধ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার সংখ্যাই বেশি। ইতিমধ্যেই প্রত্যেকটি আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এতো গেল সাধারণ মানুষের কথা৷ কলকাতা থেকে কিছুটা দূরেই বানিজ্যের শহর মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতেই ঘটে গিয়েছে আরও একটি রহস্যজনক আত্মহত্যার ঘটনা৷ গত ১৪ ই জুন অবসাদে আত্মহত্যা করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। যা নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে৷ পাশাপাশি জুনের শেষদিকেই অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছেন মাত্র ১৬ বছর বয়সী জনপ্রিয় টিকটক স্টার সিয়া কক্কর। তবে এদের জীবনে অভাব অনটন না থাকলেও কি কারণে এরা আত্মহত্যা করলেন তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে আত্মহত্যা নিয়ে সমীক্ষার কাজ করছে লালবাজারের বিশেষ টিমও। আত্মহত্যা করতে চলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন খবর পেয়ে লকডাউনের মধ্যেই পুলিশ দুজনকে বাঁচিয়েছে। পাশাপাশি সুশান্তের মৃত্যুর পর কলকাতা পুলিশের কমিশনারের পক্ষ থেকে শহরবাসীকে বলা হয়েছে, কেউ যদি কখনো অবসাদে ভোগেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি যেন ১০০ ডায়ালে ফোন করেন। তাঁর পাশে এসে দাঁড়াবে পুলিশ।