বিশেষ সংবাদদাতা: আটলান্টিক কিংবা প্রশান্ত মহাসাগর নিদেন পক্ষে কালে ভদ্রে এদের দেখা মেলে ভারত মহাসাগরে কিন্তু বঙ্গোপসাগরে এদের বাস নয়। বিশ্বের দীর্ঘকায় তিমিদের জগতে বেলেলিয়েনোপটেরা ব্রাইডস বা সংক্ষেপে ব্রাইডস তিমির উপসাগরে আসা মানেই সাধারনভাবে পথ ভুলে কিংবা ব্যতিক্রমী কোনও প্রয়োজনে ঢুকে পড়া। সোমবার তেমনই এক পথভোলা তিমির বিশালাকার মৃতদেহ পাওয়ায় হইচই পড়ে গেল মন্দারমনির সৈকতে।
বনদপ্তরের কর্মীরা জানিয়েছেন আনুমানিক ২০ হাজার কেজির ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই ভিন দেশি তিমিটি নজরে আসে মন্দারমণির সমুদ্রসৈকতে সোমবার সকালে, ভাটার সময়। তিমিটির শরীরের সর্বাধিক বেড় ছিল ১৪ ফুট ।
সকালের দিকে খানিক নজরে এলেও জোয়ারে তা ভেসে চলে যায় সমুদ্রের বেশ কিছুটা ভেতরে। দুপুর নাগাদ ফের ভেসে আসতে দেখা যায় সমুদ্রপাড়ের দিকে।বিকেল নাগাদ জলধা-তাজপুর মোহনার কাছাকাছি সেটি ভেসে আসে। বিশালাকার এই তিমির খবর ছড়িয়ে পড়ে কানে কানে, মোবাইলে মোবাইলে। বিশ পঞ্চাশ কিলোমিটার দূর থেকে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন মন্দারমনির সমুদ্র সৈকতে। জানা গেছে স্থানীয়রা তো ছিলই পাশাপাশি কাঁথি, রামনগর, দিঘা, হলদিয়া, তমলুকের বাসিন্দারাও চলে আসেন বাইক, চারচাকায়। পড়ে যায় সেলফি তোলার হিড়িক।
বনদপ্তরের অধিকারিকরাই জানিয়েছেন, এটি ব্রাইড’স তিমি। দেহে পচনের ধরন বলে দিচ্ছে অন্তত সপ্তাহখানেক আগে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে যদিও মৃত্যুর কারন স্পষ্ট নয়। জাহাজের ধাক্কায় বা অন্য কোনও কারণে আহত হয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ে দৈত্যাকার প্রাণীটি উপকূলে ভেসে এসেছে বলে মনে করছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা।সমুদ্রসৈকত থেকে মৃত তিমিটিকে সরাতে বিকেলে জেসিবি নিয়ে আসা হয়। তারপর সমুদ্রের জলসীমা ছাড়িয়ে অনেকটা উপরে গভীর গর্ত খুঁড়ে তিমিটিকে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করে বন দপ্তর।
দিঘায় মেরিন অ্যাকোরিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের বিশেষজ্ঞরা তিমিটি নিয়ে উৎসুক ছিলেন প্রথম থেকেই। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক এস বালাকৃষ্ণন বলেন, বেলিন প্রজাতির ব্রাইড’স তিমি এটি।বিজ্ঞান সম্মত নাম ‘Belaenoptera Brydei’। তিমিটি স্ত্রী এবং পূর্ণবয়স্ক।এই প্রজাতির তিমি আরব সাগর, ভারত মহাসাগরে বিচরন করলেও। বঙ্গোপসাগর এদের বাসভূমি নয়৷’
অন্য আরেক বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত টুডু বলেন, ‘গভীর সমুদ্রে খাবারের অভাব হলে কিংবা প্রজননের সময় তিমিরা অগভীর জলের দিকে চলে আসে ৷তখন জাহাজে ধাক্কা খেয়ে মরে যায়৷ যদিও এই তিমির মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়।’
দিঘার মেরিন অ্যাকোরিয়ামে দর্শকদের জন্য একটি অতি দীর্ঘকায় ব্রাইডস তিমির অস্থি কাঠামো সংরক্ষন করা আছে। ৪২ ফুট লম্বা ওই অস্থি কাঠামো বা কঙ্কালটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দিঘার মোহনা এলাকায় উদ্ধার হওয়া ব্রাইডস প্রজাতিরই তিমির। একটি মৃত অবস্থাতেই সেই তিমি মোহনা থেকে ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে সেটি আটকে পড়েছিল মাছ ধরার ট্রলারের জালে ৷
সোমবার মন্দারমণিতে উদ্ধার হওয়া তিমিটির ডি এন এ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্ৰহ করে নিয়ে গেছেন দিঘা মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের বিশেষজ্ঞরা। গত চারবছরে ভারতের সমুদ্র জল সীমায় পাওয়া এটি দ্বিতীয় ব্রাইডস তিমি। ২০১৬ সালে আরব সাগরের জুহু বীচে মিলেছিল একটি অক্ষত ব্রাইডস তিমির মৃতদেহ। কেন ব্রাইডস প্রজাতির তিমিরা বারবার নিজের এলাকা ছেড়ে ঢুকে পড়ছে তা ভাবাচ্ছে সমুদ্র প্রানী বিশেষজ্ঞদের।