Homeএখন খবরদল, শাসকদল আর সর্বদল

দল, শাসকদল আর সর্বদল

নিত্য গুপ্ত: আমফানের পর বেরিয়ে পড়েছে আসল চেহারা। তছনছ আর লন্ডভন্ড দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ সুন্দরবন এলাকা। কিন্তু লুঠ থেমে থাকেনি তৃনমূল নেতাদের। পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে ক্ষতিপূরনের টাকা নিজেদের নামে, নিজেদের আত্মীয়দের নামে ঢুকিয়ে বসে আছেন। প্ৰকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ক্ষতিপুরনের টাকা থেকে বঞ্চিত, ত্রান থেকে বঞ্চিত। অসহায় ,দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষ ফেটে পড়েছেন, কোথাও তৃনমূল নেতাদের ঘিরে বিক্ষোভ তো কোথাও নেতাদের কানধরে ক্ষমা চাওয়ানো হচ্ছে। কিন্তু সব চেয়ে বিপদের কারন এই যে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসগুলি ঘিরে চলছে ভাঙচুর, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ঠিক যেমনটি ২০১১ আগে মমতা ব্যানার্জীর দল করত।

এই পরিস্থিতিতে বুধবার সর্বদল বৈঠকে আমফান বিধ্বস্ত এলাকার মানুষের কাছে মুখ্যমন্ত্রী আবেদন জানিয়েছেন, ক্ষতিপুরন নিয়ে দুর্নীতি হলে অভিযোগ জানান কিন্তু ভাঙচুর করবেননা। যদিও মানুষের প্রশ্ন অভিযোগ জানাবেন কার কাছে? এতদিন যাবৎ মানুষকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। বিডিও তৃনমূল নেতাদের কথাতেই ওঠে বসে,বিক্ষোভ দেখাতে গেলে পুলিশ মারধর করে, মামলা দেয়। দিনের পর দিন ভোট দিতে পারেনি মানুষ। আর সেই সমস্ত ক্ষোভ এখন উজাড় করে ফিরিয়ে দিচ্ছে মানুষ। ভুল পথ কিন্তু মানুষের ধারনা এটাই ঠিক পথ, এ পথেই একদিন এগুতে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেছিল তৃনমূল।

মুখ্যমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠক করছেন আজকাল কিন্তু সবাই জানেন যে এধরনের সর্বদলে তাঁর কোনও আস্থাই নেই। ২০১১ র আগেই দক্ষিন ২৪পরগনার জেলা পরিষদ তৃনমূলের। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জেলার উন্নয়নে বৈঠক করতেন কিন্ত তৃনমূল সভাধিপতি শমিমা শেখ কোনও দিনই সে সভায় হাজির থাকতেন না। কারন মমতা ব্যানার্জীর নির্দেশ। আবার ২০১১ পর ক্ষমতায় তৃনমূল কংগ্রেস কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের অন্তরা ভট্টাচার্য। জেলার উন্নয়নের বৈঠকে কোনও দিন ডাক পাননি। স্বাভাবিক ভাবেই আজ যখন মুখ্যমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠকের আহবান করেন তখন মানুষের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, মন থেকে নয়, দায়ে পড়ে সর্বদলীয় হয়েছেন তিনি আর সে দায় বাংলাকে যতটা না বাঁচানোর তার চেয়েও বেশি ২০২১শে তৃনমূল দলটাকে বাঁচানোর কারন ক্ষমতাহীন এই দল স্রেফ কর্পূরের মত উবে যাবে।

করোনা পর্বে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি দেখেছে রাজ্য। রাজ্যের শাসক দলের নেতা মন্ত্রীরা এমনকি পুঁচকে মাঝারি নেতারা অবলীলায় ত্রান বিলি করেছেন এবং অনেক জায়গাতেই জনগনের জন্য বরাদ্দ রেশনের চাল কার্যত দোকান থেকে লুট করে নিয়েই এই ত্রান চলেছে। প্রথম দিকে চুপচাপ থাকলেও পরে মুখ্যমন্ত্রী খাদ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, সতর্ক করেছেন দলের নেতাদের। কিন্তু সেই ত্রান নিয়ে যখন বিরোধী দল মানুষের কাছে যেতে চেয়েছেন তখন পুলিশ দিয়ে তাঁদের আটকানো হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা কর্মী এমনকি নির্বাচিত সাংসদ জনপ্রতিনিধিরা যেতে পারেননি এলাকায়! ঠিক একই ঘটনা আমফান বিধ্বস্ত এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রী আগে ভাগেই ঘোষনা করে দিলেন কোনও রাজনৈতিক দলকেই ত্রান দিতে দেবেননা! কেন? সরকারি ত্রান নিজের দলের নেতারা বিলি করে দলের ইমেজ বাড়াবে বলে? শুধু কি তাই রাজনৈতিক দলের বাইরে অনেক অরাজনৈতিক দল সংগঠন ত্রান নিয়ে গেছেন তাঁদের ত্রান কেড়ে নিয়ে নিজেদের দলীয় ব্যানার টাঙিয়ে সেই ত্রান বিলি করছেন তৃনমূল নেতারা।

এখন সমস্যা হচ্ছে সরকার যখন প্রথমদিকে সর্বদলের পরিবর্তে শাসকদলকেই প্রমোট করে যাচ্ছিল তখন শাসকদলের নেতা কর্মীরাও লুটের সুযোগ করে নেওয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সুবিধা পেয়ে গেছে। যেহেতু বিরোধিতার অস্থিত্বকেই বিলোপ করার সব রকম বন্দোবস্ত সরকারি তরফেই করা হয়েছে তাই লুটেরও পোয়া বারো হয়ে গেছে। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতিতে বিদ্রোহের ঢং টাই সর্বদলীয় হয়ে গেছে। সব বিরোধী মতের সঙ্গে সামিল হয়ে গেছেন একদা তৃনমূলের নিচু তলার সমর্থকরাও কারন আমফানে লাভবান শুধুই নেতারা।

নিশ্চিতভাবেই এখন ভোট কুশলী প্রশান্ত কুমারের পরামর্শে মুখ্যমন্ত্রীর সর্বদল না হওয়ার কোনও বিকল্পই নেই। আর কী আশ্চর্য! ক্ষমতায় আসার পরই যিনি দশবছর বিরোধীদের চুপ করে বসে থাকার হুঙ্কার দিয়েছিলেন এবং তা কার্যকরী করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে বহাল করেছিলেন সেই তিনি ঠিক ১০বছরের মাথাতেই সর্বদল হয়ে উঠছেন। সর্বদলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আক্ষেপ করেছেন , তাঁর কথা কেউ আজকাল শোনেনা বলে! এও এক আশ্চর্য এবং সত্যি উপলব্ধি বোধহয়। তাঁর কথা আর কেউ শুনবেনা, কেউই না। এমন কি সর্বদল হলেও। ১০বছর চুপ করে থাকার পর এবার জনগনের কথা বলা শুরু হয়ে গেছে যে!

RELATED ARTICLES

Most Popular